পর্তুগালের গন্ডোমার শহরের শান্ত সকালে শোকের স্রোত বয়ে গেল। শনিবার সকালে লিভারপুল তারকা দিয়েগো জোতা এবং তার ভাই আন্দ্রে সিলভার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে জড়ো হয়েছিলেন পরিবারের সদস্য, বন্ধু, বর্তমান ও সাবেক সতীর্থরা।
২৮ বছর বয়সী জোতা এবং ২৫ বছর বয়সী আন্দ্রে স্পেনের জামোরার কাছে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভোরে নিহত হন।
চার্চে যখন দুই ভাইয়ের কফিন বহন করা হয়, তখন সেই দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়। জোতা ও আন্দ্রের লাল ফুলের তৈরি দুইটি জার্সির আকৃতির মালা চার্চে বহন করেন লিভারপুলের অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক এবং ম্যানেজার আর্নে স্লট। একটিতে লেখা ছিল জোতার লিভারপুলের জার্সি নম্বর ২০, অন্যটিতে আন্দ্রের পেনাফিয়েলের জার্সি নম্বর ৩০।
সবাই কালো পোশাকে নীরব হয়ে চার্চে প্রবেশ করেন। বাইরে জড়ো হওয়া মানুষদের একটানা হাততালি যেন সেই নীরবতা ভেঙে শোকের ভাষা প্রকাশ করল।
জোটার স্ত্রী রুট কারদোসো, যিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বিয়ে করেছিলেন, তিনি পরিবারের সঙ্গে এসেছিলেন। গন্ডোমারের শত শত বাসিন্দা, যেখানে জোটা বড় হয়েছেন, ভিড় করেছিলেন প্রিয় সন্তানকে শেষ বিদায় জানাতে।
পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের জন্য ব্যক্তিগত এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পোর্তোর বিশপ মানুয়েল লিন্ডা।
তিনি জোতার বাবা-মা, স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ভালোবাসার একতা মৃত্যুর থেকেও শক্তিশালী।’
অ্যান্ড্রের কফিন বহন করেন পেনাফিয়েলের খেলোয়াড়রা। রুবেন নেভেস ছিলেন জোতার কফিন বহনের দলে। পেছন থেকে ভাঙা হৃদয় নিয়ে স্ত্রী রুট কফিনের পিছু নেন।
পর্তুগালের জাতীয় দলের সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও কানসেলো, রেনাটো ভেইগা, জোয়াও ফেলিক্স, জোসে ফন্তে, দানিলো, অ্যাড্রিয়েন সিলভা, এমনকি ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার বার্নার্দো সিলভাও উপস্থিত ছিলেন।
বার্নার্দো সিলভা সাংবাদিকদের বলেন, ‘রুট, বাচ্চারা, বাবা-মায়ের কষ্ট কল্পনাও করতে পারি না। জোতার বন্ধুত্ব, তার হাসি, তার দৃঢ়তা—সবই মনে থাকবে। প্রতিটি জয়ের সময় সে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। তার নম্বর ২০ এখন আরও বেশি অর্থবহ হয়ে গেল।’
মাত্র ২২ জুন পোর্তোতে শৈশবের প্রিয় মানুষ রুটকে বিয়ে করেছিলেন জোতা। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এই শোক যেন অসহনীয়।
বিশপ লিন্ডা তিন শিশুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রিয় দিনিস, মাফালদা, দুয়ার্তে—তোমরা হয়তো বুঝতে পারছ না, তবুও এই কষ্টের ভার অসীম। তোমাদের মা এবং দাদু-দাদির জন্য এ বেদনা আরও গভীর। দুটি কফিনের সামনে দাঁড়ানো যে কত বড় যন্ত্রণা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
অ্যানফিল্ডে হাজারো সমর্থক ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। জোটা লিভারপুলের হয়ে ১৮২টি ম্যাচ খেলেছেন, জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ এবং দুটি কারাবাও কাপ। পর্তুগালের হয়ে ৪৯টি ম্যাচ খেলে জিতেছেন দুটি উয়েফা নেশনস লিগের শিরোপা।
অন্যদিকে, আন্দ্রে সিলভা পেনাফিয়েলের হয়ে পর্তুগালের নিম্ন বিভাগের ফুটবলে খেলতেন।
আজকের এই বিদায়ে কেবল দুটি প্রতিভার অকাল প্রস্থান নয়, হারিয়ে গেল দুই পরিবারের স্বপ্ন, হাজারো সমর্থকের ভালোবাসা এবং একটি শহরের গর্ব।
মন্তব্য করুন