মৌসুম শেষের দামামা বেজেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। স্প্যানিশ পরাক্রমশালী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে আগামী ১ জুন রাতে ওয়েম্বলিতে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এরই সঙ্গে শেষ হবে চলতি মৌসুম। এর পরই শুরু হবে ইউরো। যেখানে খেলবে ইউরোপের পরাশক্তিরা। তবে সেটা জাতীয় পর্যায়ে। ফুটবলে ইউরোপের প্রাধান্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। লাতিনের শৈলী আর ইউরোপের পাওয়ার এক সময় সর্বজন চর্চিত থাকলেও দলগত নৈপুণ্যে লাতিনরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে। যদিও লাতিনের ফুটবলাররাই ইউরোপের জাগরণের মূল শক্তি। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জাঁকালো আয়োজন হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
স্প্যানিশ জায়ান্টদের ময়দানি যুদ্ধ, রিয়ালের অপ্রতিরোধ্য ইতিহাস, রোনালদো-মেসির টক্কর, জার্মানি ক্লাবগুলোর নিজভূমে বিজয়গাথা, ইতালির জায়ান্টদের ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়া—এরকম অনেক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ফুটবলবিশ্বে আলোড়ন তোলা এই আসরের কিছু রোমাঞ্চকর ম্যাচ আর ঘটনা বিবৃত হলো এখানে।
ইউরোপিয়ান কাপ নামে টুর্নামেন্টের সূচনা
১৯৫৫ সালে যে টুর্নামেন্টের সূচনা। ইউরোপ মাতানো তথা বিশ্বের বড় বড় ক্লাব নিয়ে এই আয়োজন শুরু করে ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থা। ১৯৯৫ সালের আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। আর বিশ্বনন্দিত এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব এসে পড়ে উয়েফা তথা ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাঁধে। নামকরণের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমূল পরিবর্তন আসে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংযোজনসহ বদলে যায় আগের অনেক নিয়ম, তৈরি হয় নতুন ইতিহাস; আর জন্ম নেয় নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা।
শুরু থেকেই রিয়ালের ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ মন্ত্র
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর রিয়াল মাদ্রিদ যেন একই সূত্রে গাঁথা। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে অভিজাত এ আসরে রিয়ালের মতো এত সাফল্য আর কারও নেই; এমনকি ধারেকাছেও নেই অন্য ক্লাবগুলো। রিয়ালের সাফল্য শুরু কিন্তু সেই প্রথম আসর থেকেই। সেই আসরের ফাইনালেই রিয়ালের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা দেখা যায়, যে মানসিকতা এখনো ধরে রেখেছে ক্লাবটি। প্রথম আসরের ফাইনাল প্যারিসের পার্ক দেস প্রিন্সেসে রিয়াল মাদ্রিদ ও স্তাদ দে রেঁসের মধ্যে হয়েছিল। শুরুর ১৫ মিনিটে ২-১ গোলে পিছিয়ে গিয়েও একতোর রিয়ালের জোড়া গোল এবং আলফ্রেদো দি স্তেফানো ও মার্কোস আলোনসোর গোলে রিয়াল মাদ্রিদ ৪-৩-এ ম্যাচ ও শিরোপা জিতে নেয়।
বার্সা-বেনিফিকায় আধিপত্যে ধস রিয়ালের
প্রথম পাঁচ আসরে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা রিয়ালকে ১৯৬০-৬১ মৌসুমে আটকে দেয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা। প্রথম পর্বেই দুই লেগে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে রিয়ালের আধিপত্যের অবসান ঘটে। পরে বার্সাকে হারিয়ে বেনিফিকা চ্যাম্পিয়ন হয়। পরের আসরেও বেনিফিকা শিরোপা জিতে নেয় ফাইনালে রিয়ালকে ৫-৩ গোলে বিধ্বস্ত করে।
শোক কাটিয়ে ইংরেজ ক্লাব ম্যানইউর সাফল্য
ফুটবলে ইংরেজদের প্রভাব ব্যাপক। প্রথমবারের মতো ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে কোনো ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ইউরোপের শিরোপা জিতে নেয় প্রবল শক্তিধর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ফাইনালে তারা ববি চার্লটনের জোড়া গোলের বিনিময়ে অতিরিক্ত সময়ে সেই সময়ের শক্তিশালী বেনফিকাকে ৪-১ গোলে হারিয়েছিল। এই ফাইনালটি মিউনিখ এয়ার দুর্ঘটনার দশ বছর পর আয়োজিত হয়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় ইউনাইটেডের ৮ খেলোয়াড় জীবন হারিয়েছিলেন এবং কাপ বিজয়ী ম্যানেজার ম্যাট বাসবি আহত হয়েছিলেন। সেই শোক কাটিয়ে চোখের জলে শিরোপা উৎসর্গ করা হয় নিহতদের প্রতি।
ক্লাব ছাপিয়ে স্পেন-ইতালির লড়াই
রিয়াল-বার্সার আধিপত্য স্পেন ফুটবলে অতিসাধারণ বিষয়। তবুও ফাঁকতালে অন্য ক্লাবগুলো তাদের চোখ রাঙানি দেয়। ২০০৪ সালের ঘটনা। দেপোর্তিভো লা করুনা তখন স্পেনে নিজেদের সেরা সময় পার করছে। ওই সিজনে তাদের দাপটে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো দল লিগে খেই হারিয়ে ফেলেছিল। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে দেপোর্তিভো ইউরোপিয়ান ফুটবলশক্তি এসি মিলানের কাছে হেরে যায় ৪-১ গোলে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত না হয়ে স্পেনের ক্লাবটি ফিরতি লেগে ০-৪ গোলে এসি মিলানকে হারিয়ে নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। এই ম্যাচ নিয়ে নানা তিক্ততা শুরু হয় স্পেন ও ইতালির মধ্যে। পরে অবশ্য সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এক ম্যাচে মেসির পাঁচ
ইউরোপের মাটিতে কোনো ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা খুব সহজ কথা নয়। আর এর বেশি কল্পনা করাও বাড়াবাড়ি। আর পাঁচ গোল! সুপার হ্যাটট্রিক তো অচিন্তনীয়। বার্সার সুপারস্টার লিওনেল মেসি সেই অভাবনীয় কাজকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে আর্সেনালের জাল চারবার কাঁপানোর দুই বছর পর বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে ৫ গোল করেন মেসি। কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো, ভাগ্য সহায় হলে সেদিন মেসির ৬ গোলও হতো।
লিভারপুলের জন্য আইন বদল উয়েফার
উয়েফার নিয়ম ছিল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম চার দল পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারবে। ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল লিভারপুল। কিন্তু লিগে হতাশ করে এভারটনের পেছনে থেকে পঞ্চম হয়। এতে তাদের পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না খেলাটা নিশ্চিত হয়ে যায়। আগের আসরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেও ইংলিশ ফুটবল ফেডারেশন প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ ক্লাব হিসেবে এভারটনকে সুযোগ দেয় পরের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাইপর্ব খেলার জন্য। এর ফলে উয়েফা বাধ্য হয় নিয়ম পরিবর্তনের। তারা তাদের দীর্ঘদিনের নিয়ম পরিবর্তন করে লিভারপুলকে বাছাইপর্ব খেলার সুযোগ করে দেয়।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ১০০
রুড ফন নিস্টলরয়ের ৫৬ গোলের রেকর্ড টিকে ছিল অনেকদিন। তারপর রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেস সেই রেকর্ড নিয়ে যান ৭২-এ। ধূমকেতুর মতো এসে পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে গোলসংখ্যার রেকর্ড নিয়ে গেলেন তিন অঙ্কে। প্রথমবারের মতো গোলের সেঞ্চুরি করেই তিনি থামেননি। ইউরোপ ছেড়ে সৌদিতে পাড়ি জমানোর আগ পর্যন্ত করে ফেলেন ১৪০ গোল। অ্যাসিস্ট ৪২। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার অবদান ১৮৩ গোলে। রোনালদোর এই রেকর্ড কতদিনে ভাঙে—সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিনই বটে।
এক ক্লাবের হয়ে মেসির সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড
রোনালদোর পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শত গোলের মাইলফলকে পৌঁছান আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড করে তিনি ফুটবল সাম্রাজ্যে সেরাদের কাতারে পৌঁছে যান। একক কোনো ক্লাবের হয়ে ১২০ গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শীর্ষে আছেন। রোনালদো তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন। তবে তিনি গোলগুলো করেন ম্যানইউ ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। মেসির পরই একক ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৫ গোল করেন সিআর সেভেন।
মিরাকল অব ইস্তাম্বুল
নতুনভাবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ফাইনাল অবশ্যই লিভারপুল বনাম এসি মিলান ম্যাচটি। ২০০৫ সালে ইস্তাম্বুলে পিরলো, কাকা ও হার্নান ক্রেসপোর গোলে প্রথমার্ধেই শিরোপার আশা শেষ হয়ে যেতে বসেছিল অলরেডদের। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাইনাল দেখতে পায় দর্শকরা। ৫৪ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল লিভারপুল ০, এসি মিলান ৩। ৬০ মিনিটে তা হয়ে যায় ৩-৩। লিভারপুলের অনন্যসাধারণ ফুটবলে ৬ মিনিটে ৩ গোল হজম করে বসে এসি মিলান। এরপর শুরু আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল গোল হয়ে যাবে। দুদলই পেনাল্টি পেয়েও মিস করে বসে। শেষ পর্যন্ত গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে শেভচেঙ্কো পুনরায় গোল করতে ব্যর্থ হলে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ জিতে নেয় অলরেডরা।
বায়ার্নে বিধ্বস্ত আর্সেনাল
২০১৬-১৭ আসরে শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হয় আর্সেনাল ও বায়ার্ন মিউনিখ। প্রথম লেগের ম্যাচ বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে শুরুটা ভালোই করে গানাররা। ২০ মিনিটে থিও ওয়ালকটের গোলে আর্সেনাল এগিয়ে গেলেও বিভীষিকা নেমে আসে পরের অর্ধে। লেভানডভস্কির পর রোবেন, ডগলাস কস্তা, আর্তুরো ভিদালরা করলেন টানা পাঁচ গোল। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে একই পরিণতি বরণ করে আর্সেনাল। বায়ার্ন গুনে গুনে আবারও পাঁচ গোল দিল আর্সেনালের জালে। ফলাফল ২-১০ অ্যাগ্রিগেটে বায়ার্ন মিউনিখ কোয়ার্টার ফাইনালে।
মৃত্যুভয়েও হার মানেননি এরিক আবিদাল
শুধু ফুটবল ক্যারিয়ার নয়, ফরাসি ফুটবলার এরিক আবিদালের জীবনও ছিল সংশয়ে মুখে। লিভারের টিউমার রূপ নেয় ভয়ংকর প্রাণঘাতী ক্যান্সারে। যেতে হয় চিকিৎসকের ছুরির নিচে। সুস্থ হলেও মাঠে তিনি ফিরতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। তবে হাল ছাড়েননি বার্সেলোনার এই যোদ্ধা। ফিরে আসেন মাঠে। ২০১১ সালের ফাইনালে নেতৃত্ব দিয়ে বার্সার শিরোপা জয়ের পর দর্শকের দিকে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন সেই এরিক আবিদাল।
বার্সেলোনার রূপকথা
সেই লেভেলের এক প্রত্যাবর্তন বার্সার। লেভেলটা এতই উঁচু যে, ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ লুইস এনরিকে বলেই বসেন—‘আমার কাঁদা উচিত, কিন্তু চোখে পানি আসছে না।‘ ২০১৭ সালে পিএসজির মাঠে প্রথম লেগে ০-৪ গোলে হেরে বিদায়ের পথে কাতালানরা। পরের লেগে পুরো ফুটবলবিশ্বকে অবাক করে বার্সেলোনা ইতিহাস তৈরি করে জিতেছিল ৬-১ গোলে। যা কল্পনা করেননি বিজ্ঞ ফুটবলপণ্ডিতরাও। রূপকথার গল্প লিখে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছলেও শেষ আট থেকে বার্সেলোনা সেবার হেরে বাদ পড়ে জুভেন্তাসের কাছ থেকে।
রিয়াল মাদ্রিদ ও কোচ জিদানের হ্যাটট্রিক শিরোপা
শুরুর পাঁচ আসরে টানা শিরোপা জেতে রিয়াল। এরপর বায়ার্ন ও আয়াক্স হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করে। তবে নতুনভাবে শুরু হওয়ার পর প্রথম ক্লাব হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ে নেয়। ক্লাবের পাশাপাশি ফ্রান্স কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানও হ্যাটট্রিক শিরোপাজয়ী কোচের বিরল কৃতিত্বের ভাগীদার হন। তার মতো এই অর্জন আর কেউই করতে পারেননি।
সার্জিও রামোসের মাথা
২০১৩-১৪ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। ৩৬ মিনিটে দিয়েগো গডিনের গোলে এগিয়ে যায় অ্যাতলেটিকো। ৯০ মিনিট শেষে সবার অপেক্ষা শেষ বাঁশি বাজার। রেফারির মুখে বাঁশি। সবাই ভেবে নেয় শিরোপা ভিসেন্তে ক্যালরেদনেই যাচ্ছে। ঠিক তখনই ৯৩ মিনিটে সার্জিও রামোসের ভুবনখ্যাত সেই হেড। আর গোল। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখান থেকে গ্যারেথ বেল, রোনালদো ও মার্সেলোর গোলে রিয়াল মাদ্রিদ শিরোপা জিতে নেয়। কিন্তু একজন সার্জিও রামোস যদি শেষমুহূর্তে ওই গোল না করতে পারতেন? এই আফসোস হয়তো অনেকদিন পোড়াবে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে।
মন্তব্য করুন