ভালোবাসার শহরে ক্রীড়াবিদের মিলনমেলা! ঐতিহ্য ভেঙে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠলো প্যারিস অলিম্পিকের। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে।
সিন নদীর মাঝে জাতীয় পতাকা নিয়ে অলিম্পিকের মার্চপাস্টে অংশ নেন অংশগ্রহণকারী সবগুলো দেশের অ্যাথলেটরা। কর্মকর্তাদের নিয়ে ছোট্ট নৌকায় ছিলেন বাংলাদেশের পাঁচ অ্যাথলেটও। তবে অ্যাথলেটদের মাঝে খুববেশি উৎফুল্ল দেখা যায়নি।
বৃষ্টিভেজা রাতে বাংলাদেশ সময় ঠিক ১২টায় শুরু হয় প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মার্চপাস্টে রীতি মেনে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিস ছিল সবার আগে। আর সবার শেষে আয়োজক দেশ ফ্রান্স। মাঝের দেশগুলো নির্ধারিত হয় ইংরেজি এলফাবেটিক শব্দের আদলে।
নদীর পাড়ে হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ৯৪টি নৌকায় মার্চপাস্ট করেন ২০৬ দেশের অ্যাথলেট। তাদের নিয়ে আসা হয় ছোট, বড় নৌকায় করে। সিন নদীতে প্যারিস অলিম্পিকের বৈচিত্র্যময় উদ্বোধনী মার্চপাস্টে অংশ নেয় বাংলাদেশের কন্টিনজেন্ট। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে জাতীয় সংগীত।
তবে একটি বিষয় ছিল লক্ষনীয়। ক্রীড়াবিদদের চেয়ে প্রাণবন্ত ছিলেন বাংলাদেশের অফিসিয়ালরা। সরাসরি অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়া তীরন্দাজ সাগর ইসলামের বহন করার কথা ছিল জাতীয় পতাকা। তবে তা বেশির ভাগ সময় ছিল কর্তাদের কাছেই।
৫ অ্যাথলেটের সঙ্গে কোচ-কর্মকর্তাসহ প্যারিস গিয়েছেন ৮ জন। ১৩ জনের দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব ও শ্যুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশের লক্ষ্য ভালো করার। তাই তো অলিম্পিক গেমসে ক্রীড়াবিদদের লড়াইটা অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে নয়। মূল লড়াইটা করতে হবে নিজের সঙ্গে নিজের। ছাড়িয়ে যেতে হবে নিজের সেরা পারফরম্যান্সকে। অন্য দেশের প্রতিযোগীদের টাইমিং কিংবা স্কোর দেখে অনেক ক্ষেত্রেই মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজতে হয় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া ক্রীড়াবিদদের। সেটা ভেবেই হয়তো মার্চপাস্টের সময় চুপচাপ এক কোনো বসেছিলেন সাঁতারু সোনিয়া খাতুনসহ অন্য চার অ্যাথলেট।
ক্রীড়াবিদদের জবাবদিহি দিতে হয়, মুখোমুখি হতে হয় গণমাধ্যমের। কিন্তু সেটি থেকে মুক্ত কর্মকর্তারা। তাই তো মার্চপাস্টে ক্রীড়াবিদের চেয়ে অনেক বেশি প্রফুল্ল, প্রাণবন্ত আর উৎফুল্ল দেখালেন কর্তারা।
সাফল্যর ব্যারোমিটার বলছে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সবচেয়ে অগ্রসর খেলা হচ্ছে ক্রিকেটে। বৈশ্বিক আসরে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা কি করবে— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া যায়!
বাকি খেলাগুলোর কী অবস্থা? শচনীয় অবস্থা দেখে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, ক্রীড়াঙ্গনের নীতি নির্ধারকরা কি একটি বারের জন্য ভাবেন— তাদের কি করনীয় আর তারা করছি?
সিন নদীতে ছোট নৌকায় বাংলাদেশের পতাকা দেখে আর জাতীয় সংগীতের সুরে শিহরণ জাগেনি অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অলিম্পিকে পদক জিততে না পারা সবচেয়ে জনবহুল দেশ--বাংলাদেশ। বিশ্ব গণমাধ্যমে এমন শিরোনাম দেখেও ঘুম ভাঙে না কর্তাদের।
পদক তো দূরের পথ এখনও বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদরা কোটা প্লেসের মাধ্যমে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জনের স্বপ্ন দেখেন। এখনও অলিম্পিকে খেলার জন্য আয়োজকদের দয়া-দাক্ষিণ্যর (ওয়াইল্ড কার্ডের) জন্য প্রতীক্ষায় থাকতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মত ৫৯৪ জনের বড় বহর নয়; প্রয়োজন বেলিজ, লিখেইনস্টাইন, নাউরু কিংবা সোমালিয়ার মত একজন ক্রীড়াবিদ। যিনি অন্তত আশা জাগাবেন পদকের। এর আগে তাকে করতে হবে প্রস্তুত, দিতে হবে লড়াইয়ের রসদ।
মন্তব্য করুন