দেশের সাঁতার অঙ্গনে আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পুরোনো। সাঁতারু, সাঁতার সংগঠক, বিদেশি কোচ, ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীদের সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও বহাল তবিয়তে টিকে আছেন সাঁতারের বিতর্কিত এই সংগঠক। তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন-পরবর্তী সময়ে এসে অপকর্মের ফল ভোগ করবেন আব্দুল হামিদ।
নারী সাঁতারুদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ, আপত্তিকর মন্তব্য, বিগত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের জন্য সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নেওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, সাঁতার ফেডারেশনের বিভিন্ন খাত থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ নেওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ করা হয়েছে আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে। সাবেক সাঁতারু মো. আতিকুর রহমানের করা অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নানা নথিও। অভিযোগ তদন্ত করতে এনএসসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ আশরাফুল আলম কালবেলাকে বলেছেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে প্রতিবেদন এনএসসির সচিবের (মো. আমিনুল ইসলাম) কাছে পাঠানো হয়েছে।’
উল্লিখিত আব্দুল হামিদ সাঁতার ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে প্রভাব খাটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ পার্ক তে গুনের কাজে বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে, যা জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা সাঁতারুদের অনুশীলনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। জাতীয় দলের সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা, নাঈমা আক্তার, রোমানা আক্তার, জুয়েল আহমেদ, আরিফুল ইসলাম ও নাজমা খতুন আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ফেডারেশনে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। জাতীয় দলের ক্যাম্প কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকালে আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে পৃথক পত্রের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন জাতীয় দলের ৮ সাঁতারু—রুবেল রানা, অনিক ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, আসিফ রেজা, মাহমুদুন্নবী নাহিদ, পলাশ চৌধুরী ও মো. কাওসার হোসেন।
ওপরের নানা ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছিলেন আব্দুল হামিদ। ফেডারেশনের সুনাম ক্ষুণ্ন করা এবং কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানোর কারণে সব সাঁতার কার্যক্রম থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাকে। অভিযোগ আছে, নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত পত্র গায়েব করে এবং সাঁতার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে ছিলেন বিতর্কিত আব্দুল হামিদ!
সম্প্রতি এনএসসিতে করা সাবেক সাঁতারু মো. আতিকুর রহমানের অভিযোগের সঙ্গে রেফারেন্স হিসেবে উল্লিখিত বিষয়গুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মো. আতিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সবার কাছে ভালো হতে পারেন না, আবার একজন ব্যক্তি সবার দৃষ্টিতে মন্দও হতে পারেন না। কিন্তু আপনি সাঁতার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করলে আব্দুল হামিদ সম্পর্কে ইতিবাচক কথা খুব কমই শুনতে পাবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারোর প্রতিবাদ করা উচিত। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি অভিযোগ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাঁতারে ক্রীড়াবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে আমি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই এ নিয়ে আমি বাড়তি মন্তব্য করতে চাই না। আশা করছি, সবকিছু যাচাই করে এনএসসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
মন্তব্য করুন