কালবেলা ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
মরক্কোয় ভূমিকম্প

এক স্কুলের কোনো শিক্ষার্থীই বেঁচে নেই

নিহত ৩২ শিক্ষার্থীর সবার বয়স ছয় থেকে ১২ বছরের মধ্যে ছিল। ছবি : সংগৃহীত

মরক্কোর পাহাড়ি গ্রাম আদাসেল। এই গ্রামের একটি স্কুলে পড়ান নাসরিন আবু এলফাদেল। গত ৮ সেপ্টেম্বর ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মরক্কো যখন বিধ্বস্ত হয় সে সময় মারাকেশ শহরে ছিলেন আরবি ও ফরাসি ভাষার এই শিক্ষিকা। ভূমিকম্পের পর সবার আগে নিজের শিক্ষার্থীদের কথাই মনে আসে তার। পরের দিনই ছুটে যান স্কুলে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর যে পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি হলেন, সেটা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। স্কুলে গিয়ে তিনি ছেলে-মেয়েদের নাম ধরে ডাকতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আবিষ্কার করেন, তার ৩২ শিক্ষার্থীর কেউই আর বেঁচে নেই! ভূমিকম্পে প্রাণ গেছে তাদের।

দেশটি শত বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেছে এবার। এতে প্রাণ গেছে প্রায় তিন হাজার মানুষের; আহতও হয়েছেন সমসংখ্যক মানুষ। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাকেশের দক্ষিণের এলাকাগুলো। ওই এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলো একের পর এক মাটিতে মিশে গেছে; আদাসেল গ্রামও সেগুলোর একটি। গ্রামটির অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি।

ওই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ছিল ছয় থেকে ১২ বছরের মধ্যে।

নাসরিন বলেন, ‘আমি গ্রামে গিয়ে আমার বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম; সুমাইয়া কোথায়, ইউসুফ কোথায়, এই মেয়েটা কোথায়, ওই ছেলেটা কোথায়? কয়েক ঘণ্টা পরে উত্তর এলো : ওরা সবাই মারা গেছে।’

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে হলো আমি ক্লাসে হাজিরা খাতা নিয়ে ওদের নাম ডাকছি। একজনের পর আরেকজন। এভাবে ৩২ জনের নাম ডাকি। ওরা সবাই এখন মৃত।’

কীভাবে তিনি ছয় বছর বয়সী খাদিজার ঘটনা শোনেন, সে বিষয়টি বর্ণনা করেন নাসরিন। তিনি জানান, খাদিজার মরদেহটি তার ভাই মোহাম্মদ ও দুই বোন মেনা এবং হানানের পাশেই পড়ে ছিল। ভূমিকম্পের সময় তারা সবাই বিছানায় ছিল; সম্ভবত ঘুমিয়ে। তারা চার ভাইবোনই তার স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘খাদিজা আমার অনেক প্রিয় শিক্ষার্থী ছিল। সে খুব সুন্দর, স্মার্ট, সক্রিয় এবং গান গাইতে পছন্দ করত। সে আমার বাড়িতে আসত। ওকে পড়া দেখিয়ে দিতে আমার খুব ভালো লাগত।’

নাসরিন বলেন, তার সব ছেলেমেয়েই পড়াশোনার প্রতি বেশ মনোযোগী ছিল। ওদের দারিদ্র্য ও জীবনযাপনে নানা সংকট ছিল। তারপরও পড়াশোনাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করত।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শেষ ক্লাস ছিল শুক্রবার রাতে। ভূমিকম্পের ঠিক ঘণ্টা পাঁচেক আগে। আমরা মরক্কোর জাতীয় সংগীত শিখছিলাম। সোমবার সকালে পুরো স্কুলের সামনে এটি গাওয়ার কথা ছিল।’

এ ঘটনায় স্কুলশিক্ষিকা নাসরিন চরম মানসিক আঘাত পেয়েছেন; ভুগছেন ট্রমায়। তিনি বলেন, ‘আমি ঘুমাতে পারি না। এখনো শোকের মধ্যে আছি। মানুষ আমাকে ভাগ্যবতী মনে করে। তবে আমি জানি না বাকি জীবন আমি কীভাবে বাঁচব।’

ভূমিকম্পে সব শেষ হয়ে গেলেও এখনো আশা ছেড়ে দেননি এই ভাষা শিক্ষিকা। দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন, চালিয়ে যাবেন শিক্ষকতা। বাকি জীবন ছেলেমেয়েদের পড়িয়েই কাটাতে চান। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তাদের স্কুলটি আবারও নির্মাণ করা হবে এমনটাই আশা নাসরিনের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মায়ের হত্যার বিচার করতে, বিপাশা হতে চায় পুলিশ

বিশিষ্টজনদের মতামত / গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই

ভার্চুয়াল বৈঠক / ইইউকে নির্বাচন বয়কটের কারণ জানাল বিএনপি 

ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি

যে কারণে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ করে দিল ইসরায়েল

‘নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা করেছে সরকার’

ভূমিকম্প আতঙ্কে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই শিক্ষার্থী আহত

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

ইউএনওর বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর 

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ইরাক

১০

অলিম্পিকে ৪ ডিসিপ্লিনে আবেদন করবে বাংলাদেশ

১১

সমমনা জোট থেকে মাইনরিটি জনতা পার্টিকে বহিষ্কার

১২

আ.লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন যারা

১৩

মোতালেবের সমর্থকদের হুমকি-ধমকি, দুই থানায় জিডি

১৪

নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে নকল, কারাগারে ২

১৫

ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমল, হাসপাতালে ভর্তি ৬০৫

১৬

ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা আওয়ামী লীগের 

১৭

অবরোধ সফলে রিজভীর নেতৃত্বে রাজধানীতে মশাল মিছিল

১৮

পুলিশ পরিচয়ে পুলিশের সঙ্গেই প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১

১৯

লেভানদোভস্কির সঙ্গে ইচ্ছা করেই বিরোধে জড়ান মেসি

২০
X