কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ০৬:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির পেছনে কলকাঠি নাড়ছে চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও মিয়ানমারে যুদ্ধরত এক সেনা। ছবি : সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও মিয়ানমারে যুদ্ধরত এক সেনা। ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষমতা দখল করে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই জ্বলছে মিয়ানমার।

গেল কয়েক বছরে মিয়ানমারের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে দেশটির জাতিগত বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ। তবে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপের একটি শক্তিশালী জোট।

বলা হচ্ছে, বিরোধ মেটাতে চীনের আহ্বানের পরই এমন সমঝোতায় পৌঁছায় লড়াইরত পক্ষগুলো।

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমানা রয়েছে। তাই দেশটিতে কোনো কিছু ঘটলে তার রেশও এসে পড়ে বাংলাদেশে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনেরও সীমানা রয়েছে। আবার মিয়ানমারে চীনের ব্যবসা রয়েছে।

এ ছাড়া চীনের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ রুট হচ্ছে মিয়ানমার। সব মিলিয়ে মিয়ানমার অশান্ত থাকলে আখেরে চীনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই গেল শুক্রবার মিয়ানমারের প্রায় ২৫০ মাইল উত্তর-পূর্বে চীনের প্রাদেশিক রাজধানী কুনমিংয়ে সমঝোতা হয় সেনাবাহিনী ও মিয়ানমারের ৩টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে।

চীনের সীমানাঘেঁষা শান রাজ্যে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। সেখানে চীনের স্বার্থ এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যদিও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া সশস্ত্র একটি গ্রুপ জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তারা শুক্র ও শনিবার শান রাজ্যের বিভিন্ন অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হামলার খবর প্রকাশ করলেও স্বাধীনভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

গেল মাসেও একবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল লড়াইরত গ্রুপগুলো। তবে সেটি টেকেনি। এই যুদ্ধবিরতিও টিকবে না বলে বিশ্বাস কিছু পর্যবেক্ষকের।

এদিকে উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যসহ সীমান্ত এলাকায় তথাকথিত ‘পিগ বুচারিং’ নিয়ে চীনের উদ্বেগ বাড়ছে। এই রাজ্যে চীনের অপরাধী সংগঠনগুলো অবৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালায়।

তারা চীনা কর্মীদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া বা লাওসে দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়। এমনকি বিশ্বের অন্য দেশের মানুষকে সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ লুটে নেয়। তাই শান রাজ্যের এসব কার্যক্রম বন্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র গ্রুপদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে চীন।

সশস্ত্র গ্রুপগুলোর জন্য শান রাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাজ্যটি চীনের লাগোয়া হওয়ায় অস্ত্র, মেডিকেল কেয়ার ও অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে পারে সশস্ত্র গ্রুপগুলো।

চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বাণিজ্যিক এই পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ এখনো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে। তবে প্রতিরোধ বাহিনী সেনাবাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।

এই রাজ্য ঘিরে চীনের আগ্রহের বড় একটি কারণ হচ্ছে এখানে শত শত কোটি ডলারের পাইপলাইন বসাচ্ছে বেইজিং। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে পাইপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছানোর জন্য শানের বিকল্প নেই।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট মালাক্কা প্রণালির অভিগম্যতার জন্য চীন মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে চীনের জ্বালানি সরবরাহের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের স্বার্থ রক্ষায় কারও না কারও ওপর ভরসা করতেই হবে চীনকে।

সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় জোর করে বসে থাকা ছাড়াও অর্থনৈতিক অক্ষমতা এবং অপরাধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও নিজের স্বার্থ রক্ষায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হতে পারে বেইজিং। আর সেনাবাহিনী ক্ষমতায় থাকলে যে মিয়ানমারে শান্তি আসবে না, তা সব পক্ষই ভালো করে জানে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘এমপি হওয়া বড় কথা নয়, মানুষের ভালোবাসাই আসল’

বিমানের ৭৪১ কোটি টাকা ক্ষতি / আত্মসমর্পণ করে সাবেক বিচারপতিসহ ৩ জনের জামিন 

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যার আসামি মামুন খুনের কারণ জানাল পুলিশ

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / সেই খুদে হাফেজকে সংবর্ধনা দিলেন ইউএনও

‘পৌরুষ’-এর অর্থ বদলেছে ছেলেদের আধুনিক দৃষ্টিতে

এশিয়া কাপের ফ্লাইট মিস বাংলাদেশের ৩ ক্রিকেটারের

ক্ষমা চাইলেন বিসিবি সভাপতি বুলবুল

এবার মিরপুরে বাসে আগুন

প্রধান উপদেষ্টাকে হুমকি দেওয়া সেই ছাত্রলীগ নেতা ইমরান গ্রেপ্তার

নাশকতার দুই মামলায় আপিলে খালাস পেলেন যুবদল নেতা ইসহাক

১০

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা 

১১

বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার 

১২

পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ / রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে তালা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ 

১৩

যেসব লক্ষণ বলে দেয় আপনার সঙ্গী আপনার জন্য সঠিক নয়

১৪

ডাস্টার দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রীকে রক্তাক্ত করলেন প্রধান শিক্ষক

১৫

শাপলা চত্বর হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাইব্যুনাল

১৬

ছোট বাথরুমকে বড় দেখানোর সহজ কিছু উপায়

১৭

অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী স্যালি গেলেন না ফেরার দেশে

১৮

ড. ইউনূসের দ্বৈত দায়িত্বে ‘স্বার্থের সংঘাত’ দেখছেন সালাহউদ্দিন

১৯

বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের চাহিদা

২০
X