

ইউক্রেনে আগ্রাসনের সমালোচনা করায় রাশিয়ার এক ব্লগারের ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) মস্কোর একটি আদালত এক ব্লগারের এ রায় ঘোষণা করে। সত্য তথ্য আড়াল করে তার বিরুদ্ধে জনসম্মুখে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এ সাজা ঘোষণা করা হয়। তবে রায় ঘোষণার সময়ে তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযুক্ত ওই ব্লগারের নাম ম্যাক্সিম কাটজ। গত বছর ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু হলে তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে ভিডিও তৈরি করেন। কাটজের ইউটিউব চ্যানেলে ১৮ লাখ সাবসক্রাইবার ছিল।
দেশটির সরকারি পত্রিকা রসিয়স্কায়া গেজেটার তথ্যানুসারে, কাটজের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউটিউবে ভিডিও তৈরির অভিযোগ রয়েছে। ওই ভিডিওতে তিনি ইউক্রেনের বেসমামরিক লোকজনের ওপর জেনেশুনে রাশিয়া হামলা করছে বলে অভিযোগ করেন।
মস্কো ইউক্রেনের আগ্রাসনের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পর রাশিয়ার একটি আইন গৃহীত হয়েছে। আইনটিকে রুশ আক্রমণের সমালোচনা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত ৭ আগস্ট ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় দিমিত্রি গ্লুখোভস্কি নামের এক সায়েন্স ফিকশন লেখকের আট বছরের কারাদণ্ড দেয় রুশ আদালত। ইউক্রেনে হামলার বর্ষপূর্তিতে ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা জানিয়ে পোস্ট দেন গ্লুখোভস্কি। তিনি সেখানে লিখেন, এক বছর আগে আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতাম যে এ যুদ্ধ রাশিয়া ও আমাদের জনগণের জন্য পীড়াদায়ক। এ যুদ্ধ জাতির জন্য মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক। এজন্য আমি ইউক্রেনকে ভালোবাসি। এ ছাড়া রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে কারাদণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েও পোস্ট দেন তিনি।
তার আগে গত ৪ আগস্ট রাশিয়ায় পুতিনের প্রধান সমালোচক কারাবন্দি বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে চরমপন্থার অভিযোগে আরও ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ওই মামলায় নাভালনির ২০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি জানিয়েছিল।
মস্কো থেকে প্রায় আড়াই শ’ কিলোমিটার দূরে মেলেখোভো এলাকার একটি কারাগারে রয়েছেন নাভালনি। সেখানেই একটি অস্থায়ী আদালতে নাভালনিকে আরও ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে ২০২১ সালে প্যারোল লঙ্ঘন, জালিয়াতি ও আদালত অবমাননার দায়ে তাকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
শুনানির সময় নাভালনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লাখো মানুষ মারা যাচ্ছে। একুশ শতকের সবচেয়ে বুদ্ধিহীন ও চেতনাহীন লড়াই চলছে।’
নাভালনির বিরুদ্ধে রুদ্ধদ্বার আদালতের এ রায় ঘোষণার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বার্তায় নাভালনি বলেন, ‘ভিন্নমত পোষণকারীদের ভয় দেখাতে ‘স্তালিন শাসনামলের’ মতো তার দণ্ড হতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভিন্নমত প্রকাশ করার সাহস না পায়।’
মন্তব্য করুন