হজ পালনের আকাঙ্ক্ষা একজন মানুষের জীবনকে যেভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন বেলজিয়ামের ২৬ বছর বয়সী যুবক আনাস আল রাজকি। জীবনের বহুদিনের স্বপ্ন পবিত্র কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে হজ পালন- বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি বেছে নিয়েছেন একটি ব্যতিক্রমী পথ। সাইকেল চালিয়ে ৯টি দেশ অতিক্রম করে অবশেষে তিনি পৌঁছেছেন সৌদি আরবের মক্কায়।
গালফ নিউজ জানিয়েছে, আনাসের এই অনন্য যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে, পবিত্র রমজান মাসের সূচনালগ্নে। তার এই মহাকাব্যিক সফরের সূচনা ছিল ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে। এরপর তিনি একে একে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মিসর, জর্ডান এবং শেষত সৌদি আরব হয়ে মক্কায় পৌঁছান।
প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই যাত্রায় তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, ভিন্ন ভিন্ন দেশের কঠিন সীমান্ত প্রক্রিয়া, বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়া এবং নানা প্রতিকূলতা। তবে এগুলো কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং যাত্রাপথে মানুষের ভালোবাসা, দোয়া এবং আতিথেয়তা তাকে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে।
সৌদি আরবে প্রবেশের মুহূর্তে তার অনুভূতি ছিল আবেগে পরিপূর্ণ। তিনি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘আল আখবারিয়া’-কে বলেন, “এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই অসম্ভব। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে এখন মক্কার মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি।”
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি এতদূর আসতে পেরেছি। এই সফর কেবল শারীরিক পরিশ্রমের নয়, এটি ছিল এক গভীর, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।
আনাস জানান, পথের ধারে যেসব মানুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সৌদি আরবের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ‘সাবক’-কে তিনি বলেন, এই যাত্রাপথে আমি অনেক মানুষকে পেয়েছি, যারা দোয়া করেছেন, সাহস দিয়েছেন। তারা যেন আমার পরিবারের মতোই হয়ে উঠেছিল।
আনাসের মতে, এই সফর শুধু হজ পালনের জন্য নয়, বরং এটি ছিল এক আত্মিক জাগরণের যাত্রা। “আমার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন এখন ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠছে,”- বলতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
যাত্রার শেষপ্রান্তে এসে এখন তার একটাই চাওয়া- পবিত্র কাবা শরিফ ছুঁয়ে দেখা। “সারা জীবন যেটা কেবল কল্পনায় দেখেছি, এখন সেটাকে নিজের চোখে দেখতে ও ছুঁতে পারব- এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
আনাস আল রাজকির এই অনন্য হজযাত্রা বিশ্বের অনেক তরুণের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে- যেখানে ইচ্ছা, সংকল্প ও আধ্যাত্মিক ভালোবাসার মিলনে সব অসম্ভবই সম্ভব হয়ে ওঠে।
মন্তব্য করুন