মুতাছিম বিল্লাহ
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ০৮:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাশ্মীরে হামলার খেসারত দেবে রাজনৈতিক বন্দিরা ?

কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান। ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে শুরু হওয়া নিরাপত্তা অভিযান শুরু হয়েছে। এতে করে কাশ্মীরি রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ হামলার খেসারত দিতে হচ্ছে রাজনৈতিক বন্দিদের।

সোমবার (০৫ মে) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (অনুচ্ছেদ ৩৭০) বাতিল করে সরাসরি দিল্লির নিয়ন্ত্রণে আনে অঞ্চলটিকে। এরপর থেকেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণী, ছাত্র, রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী’ আইন যেমন ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act) ও জননিরাপত্তা আইন (Public Safety Act-PSA) এর আওতায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। এসব আইনে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে জেলে রাখা সম্ভব।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘ এক দশক পর অনুষ্ঠিত হয় কাশ্মীরের আঞ্চলিক বিধানসভা নির্বাচন। সে সময় অনেক কাশ্মীরি পরিবারের মতো ৫০ বছর বয়সী মা শাকিলারও আশা ছিল, নতুন নির্বাচিত সরকার হয়তো তার একমাত্র ছেলে ফাইয্যাবকে জেল থেকে মুক্ত করবে। তবে ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলার পর সে আশায় গুড়ে বালি পরিস্থিতি হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিলা বলেন, নির্বাচনের পর যে সামান্য আশা জন্মেছিল, পেহেলগাম হামলার পর তা ভেঙে পড়েছে। আমার ছেলে বিদ্রোহীদের আইনে অভিযুক্ত হওয়ায় ওর মুক্তির সম্ভাবনা এখন আরও ক্ষীণ হয়ে গেছে।

নতুন দমন-পীড়নের আশঙ্কা পেহেলগাম হামলার পরপরই কাশ্মীরে বড় পরিসরের ধরপাকড় শুরু করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এখন পর্যন্ত ৯০ জনকে পিএসএতে (জননিরাপত্তা আইন) অভিযুক্ত করা হয়েছে। বহু বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা ভারত সরকারের হাতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার রাজনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছে।

শাকিলার ছেলে ফাইয্যাব ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হন। প্রথমে শ্রীনগরের একটি জেলে রাখা হলেও পরে তাকে জম্মুতে স্থানান্তর করা হয়, যা তার বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। শাকিলা বলেন, আমার কোনো রোজগার নেই। আমার ছেলেই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন আমি আট মাস ধরে ওকে দেখতেও পারিনি। ঈদও কেটেছে তার অভাবে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি : ভিন্ন বাস্তবতা গত বছরের নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টিসহ (পিডিপি) কাশ্মীরি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে বন্দিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এনসি এককভাবে ৪২টি আসনে জয় পেয়ে অন্যদের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে। তবে ছয় মাস কেটে গেলেও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো কেবল ভোটের জন্য আবেগ নিয়ে খেলেছে।

শাকিলা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শুধু ভোট নেওয়ার জন্য আমাদের আবেগ নিয়ে খেলেছে। এখন তারা নিশ্চুপ।

বন্দিদের পরিবার : দুর্ভোগের সীমা নেই শুধু শাকিলাই নন, অনেক কাশ্মীরি পরিবার প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন দূরবর্তী জেলে বন্দি প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। পুলওয়ামার বাসিন্দা ইশরাতের ভাই ২০২৩ সালে পিএসএতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রথমে জম্মু, পরে উত্তর প্রদেশে স্থানান্তরিত হন। পরিবারের আর্থিক দুর্বলতার কারণে তারা একবারও গিয়ে দেখা করতে পারেননি।

ইশরাত জানান, আমার ভাইয়ের জেলের অবস্থা ভয়াবহ। রমজানে তাদের দুপুরের খাবার দিয়ে ইফতার করতে হয়, আর রাতের খাবার সেহরিতে খেতে হয়। একটাই ফ্যান আছে, সেটাও ২৫ ফুট ওপরে লাগানো। এই গরমে সেখানে থাকা যেন দোজখে বাস করার মতো।

প্রশাসনের নীরবতা ও সাংবিধানিক প্রশ্ন কাশ্মীরের কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বন্দিদের অঞ্চল থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া ভারতের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে।

কাশ্মীরি অধ্যাপক শেখ শওকত হুসেইন আল জাজিরাকে বলেন, এভাবে বন্দিদের বাইরে পাঠানো পরিবারগুলোর ওপর ‘সম্মিলিত শাস্তি’ চাপানোর শামিল। এটা কেবল বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকেই আরও বাড়িয়ে তোলে।

সরকার কী বলছে? ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র ইমরান নাবি দার জানান, কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দায়িত্ব এখনো কেন্দ্রের নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে যারা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত নন এবং যারা অন্যায়ভাবে আটক, তাদের মুক্তি চাই। আমরা এখনো সেই প্রতিশ্রুতিতে অটল। তবে পেহেলগামের ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর হামলা
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিরোজপুরে সমিতির পরিচালকের গ্রেপ্তার দাবিতে থানা ঘেরাও

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে দেড় লাখ মানুষের সেবা

বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহারে হাজযাত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা

বরিশালের রাস্তায় উড়ছে টাকা আর টাকা

জামায়াত কর্মী পরিচয় দিয়েও রক্ষা হলো না কৃষক লীগ নেতার

আতঙ্কে ভারত, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্ত নিয়ে নতুন পরিকল্পনা

ময়মনসিংহে ভুয়া মেজরসহ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য আটক

ই-কমার্সের উন্নয়নে ই-ক্যাব নির্বাচনের পদ প্রার্থীদের মিলনমেলা

রেলিক সিটির বিরুদ্ধে রাজউকের কঠোর পদক্ষেপ

খালেদা জিয়ার আগমনে গাড়ি পার্কিংয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

১০

আলোচিত যুবলীগ নেত্রী শোভা গ্রেপ্তার

১১

আকস্মিক ধুলিঝড়ে লন্ডভন্ড সৌদিসহ তিন দেশ

১২

তেজকুনিপাড়া ও দিয়াবাড়িতে রাজউকের অভিযান

১৩

জাতির কল্যাণে সুলতান নদভীর অবদান অবিস্মরণীয় : হেফাজতে ইসলাম 

১৪

হোটেলে কাজ করা সেই ছেলেটি এখন ক্ষমতাশালী দেশের প্রধানমন্ত্রী!

১৫

আমকে জাতীয় ফল করার প্রস্তাব সাতক্ষীরার ডিসির

১৬

কোচিংবাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা উপদেষ্টার সহায়তা চায় অভিভাবক ফোরাম

১৭

৩ দিনের মধ্যে রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি

১৮

প্রকাশ্যে নারীর প্রতি অমর্যাদাকর বক্তব্যের নিন্দা এনসিপির

১৯

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ / ভারতকে মোকাবিলায় প্রকাশ্যে আসছেন পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি

২০
X