দক্ষিণ চীন সাগরের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন। তবে তাদের এ মানচিত্রের প্রতিবাদ জানিয়েছে আরও তিন দেশ। এসব দেশ চীনের এ নতুন মানচিত্রকে ভিত্তিহীন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশগুলো হলো মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। এর আগে অরুণাচলকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করলে তার প্রতিবাদ জানায় ভারত।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) নতুন মানচিত্র নিয়ে ভারতের পর এশিয়ার তিন এমন মন্তব্য করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে চীন বলেছে, যুক্তিসঙ্গত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার (২৫ আগস্ট) ইউ আকৃতির বিখ্যাত দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন। এ সাগরপথ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ব্যস্ততম এ পথে প্রতি বছর তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য হয়।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০০৯ সালে জাতিসংঘে দক্ষিণ চীন সাগরের যে মানচিত্রটি পেশ করে চীন, সেটির তুলনায় নতুনটিতে সাগরের আরও বেশি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুরোনো সেই মানচিত্রটিতে ‘৯টি ড্যাশ লাইন’ ছিল, যার মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সমুদ্রসীমার বেশকিছু অংশ নিজেদের এলাকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে।
নতুন করে প্রকাশিত মানচিত্রে বর্তমানে ১০টি ড্যাশলাইন রয়েছে। এর মধ্যে দশম ড্যাশ লাইনে তাইওয়ানের সমুদ্রসীমার কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করেছে চীন। রয়টার্স জানিয়েছে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আগের বছর ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের চীনের প্রকাশিত মানচিত্রের সঙ্গে নতুনটির মিল রয়েছে।
তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেফ লিউ রয়টার্সকে বলেন, ‘তাইওয়ান কোনোভাবেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের অংশ নয়। চীন যতই তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে নড়বড়ে অবস্থায় থাকুক, তাদের কোনো কৌশলই স্বাধীন দেশ হিসেবে তাইওয়ানের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে পারবে না।’
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন ও ২০১৬ সালে জাতিসংঘের সালিশী অনুসারে, দক্ষিণ চীন সাগরে কথিত ড্যাশ লাইনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ সময় দেশটি চীনকে আরও ‘দায়িত্বশীল’ হওয়ার আহ্বান জানায়।
এদিকে নতুন প্রকাশিত মানচিত্র নিয়ে মুখ খুলেছে মালয়েশিয়াও। তারা বলছে, নতুন মানচিত্র ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিবাদে জানানো হবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত সোমবার দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে চীন। এরপর অরুণাচল ইস্যুতে প্রতিবাদ জানায় ভারত। আর সাগরের মানচিত্র নিয়ে তীরবর্তী দেশগুলোও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ভারতের ভূখণ্ড নিজেদের দাবি করে চীনের তথাকথিত ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’ নিয়ে আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চীনা পক্ষের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলোর কোনো ভিত্তি না থাকায় আমরা খারিজ করে দিয়েছি। চীনের এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু সীমানা ইস্যুর সমাধান জটিল করবে।
এর আগে সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের অরুণাচল ও আকসাই চীনকে নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন। শুধু ভারতের দুই প্রদেশই নয়, এবারের মানচিত্রে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকে নিজেদের বলে দাবি করেছে বেইজিং। দক্ষিণ চীন সাগরের যে অংশ চীন নিজেদের বলছে, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেই সেই অংশের দাবিদার।
চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, জাতীয় জরিপ ও মানচিত্র প্রচার দিবস উপলক্ষে চীনের প্রাকৃতিক সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নতুন মানচিত্রের ছবি পোস্ট করে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীন ও অন্যান্য দেশের সীমারেখা মেনেই এই মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
চীনের এই মানচিত্রের খবর সামনে আসতেই এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, এটা চীনের পুরোনো অভ্যাস। চীনাদের এমন দাবিতে কিছু যায়-আসে না।
মন্তব্য করুন