এশিয়ার দেশগুলোতে যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে তাদের মধ্যে অন্যতম ভারতীয় বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (Research and Analysis Wing) বা ‘র’ (RAW)। ১৯৬৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ছিলেন রামেশ্বর নাথ কাও। সাধারণত বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের তথ্য সরবরাহ করে সংস্থাটি।
১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর সঞ্জীব পিল্লাই আইবি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’ (RAW) প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সাধারণত ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের তথ্য সরবরাহ করে বিশেষ এই বাহিনী। আবার কখনো বলা হয়, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং আর্থাৎ র’ (RAW) হচ্ছে ভারতের জাতীয় শক্তির দক্ষ ব্যবহারের একটি মাধ্যম। সংস্থাটি ভারতের পরমাণু কর্মসূচির নিরাপত্তাজনিত ক্ষেত্রতেও নিযুক্ত ছিল। এটি কেবল ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে দায়বদ্ধ।
রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা র’ (RAW) এর সদর দপ্তর ভারতের নয়া দিল্লি।
নিয়োগকৃত নতুন এজেন্টদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু উৎসাহমূলক আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করে সংস্থাটি। ১০ দিনব্যাপী নতুন এজেন্টদের গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত বাস্তবতা, গোয়েন্দা জ্ঞান সংক্রান্ত ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পরিচিতি লাভ করানো হয়। এ ছাড়াও সাধারণ রীতিনীতি, বাণিজ্যিক কৌশল ও তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কেও তাদের অবহিত করা হয়। পাশাপাশি স্পেস টেকনোলোজি, তথ্যগত নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্পর্কিত নানা ধারণা কৌশল শেখানো হয়। নবনিযুক্ত এজেন্টদের বিভিন্ন বৈদেশিক ভাষা ও ভৌগোলিক কৌশলগত বিশ্লেষণ নিয়েও তাদের পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয়। তাদের অধ্যয়নের তালিকায় সিআইএ, কেজিবি, মোসাদ ও এমআই৬ নিয়েও কেইস স্টাডি রয়েছে।
তাদের এও শিক্ষা দেওয়া হয় যে, শত্রু-মিত্র নিরূপণ করা দেশের পররাষ্ট্র নীতির কাজ, গোয়েন্দা সংস্থার নয়। গুরগাঁওয়ের একটি আবাসিক প্রশিক্ষণ ও ভাষা ইনস্টিটিউটে কর্মকর্তাদের এই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। মুম্বাইয়ে আর্থিক-গোয়েন্দাগিরি সংক্রান্ত একটি বহুমুখী-নিয়মানুবর্তিতামূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত করা হচ্ছে। যেখানে নবনিযুক্ত এজেন্টদের মানিলন্ডারিং ঘিরে গড়ে উঠা অপরাধ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে এজেন্টরা ফিল্ড ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (সংক্ষেপে এফআইবি) অধীনে প্রশিক্ষিত হতে থাকে। এখানে একজন এজেন্টের প্রশিক্ষণ সময়কাল ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূলত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার নানা কলাকৌশল হাতে-কলমে শেখানো হয়। এজেন্টদের এই ফিল্ড প্রশিক্ষণ দেরাদুনে ভারতীয় সেনাবাহিনী একাডেমিতে দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন