যেই হোস্টেলে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের রাজনৈতিক বিকাশ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যেখানে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যেই হোস্টেলে মুসলিম লীগের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কলকাতায় হিন্দু মুসলিম ভয়াবহ দাঙ্গা চলাকালীন উত্তাল দিনগুলো বঙ্গবন্ধু যে হোস্টেলে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে বারবার যেই হোস্টেলের গল্প উঠে এসেছে। সেই বেকার হোস্টেল আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কলকাতায় মুসলিম ছাত্রদের জন্য ১৮৯৬ সালে নির্মিত টেইলর হোস্টেলের চারপাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অপর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থার কারণে ১৯০৮ সালে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য আন্দোলন হয়। এর ফলে কলকাতায় বেকার হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। বেকার হোস্টেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত একটি সরকারি ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসটি ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১০ সালে এডওয়ার্ড নরম্যান বেকার প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রাবাসটি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ৮, স্মিথ লেনে অবস্থিত।
বঙ্গবন্ধুর কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই ছাত্রাবাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বড় একটি অধ্যায় রচিত হয়েছিল কলকাতার তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের এই হোস্টেলে। বর্তমানে কলেজটির নাম মৌলানা আজাদ কলেজ।
১৯৪২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তি হয়ে তিনি বেকার হোস্টেলে আবাসিক ছাত্র হিসেবে থাকা শুরু করেন। তিনি ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সাল নাগাদ ইসলামিয়া কলেজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরপর দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ সাল থেকে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে আবাসিক ছাত্র হিসেবে বেকার হোস্টেলের তৃতীয় তলায় উত্তর-পশ্চিম কর্নারের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ২৪ নম্বর কক্ষের সঙ্গে ২৩ নম্বর কক্ষটি সংযুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ’ করার উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই ইসলামিয়া কলেজটি তখন বেশ নামকরা প্রতিষ্ঠান ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে এখানে ঘুরতে এসেছেন মোহা. আল মুর্শেদ বুলবুল, মোহা. শামিম রেজা ও মোহা. তানভির আলম। একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত বুলবুল কালবেলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েই বেকার হোস্টেল দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কলকাতায় এসে ঐতিহাসিক এই বেকার হোস্টেল না দেখলেই নয়। তাই এখানে ছুটে আসা।’
বাংলাদেশের অনেকেই এখন বেকার হোস্টেলে যান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ পরিদর্শনে। আমাদের জাতির জনকের স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাই কমিশনের অনুমতি লাগে। আগে অনুমতির দরকার না হলেও এখন হাইকমিশনে গিয়ে অনুমতি নিয়ে এখানে আসতে হয়। অনুমতি পাওয়া গেলে রেজিস্ট্রি বইয়ে নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে তৃতীয় তলার সেই জাদুঘরে যাওয়ার অনুমতি মিলে। ২৩ আর ২৪ নম্বর কক্ষের সামনের জায়গাটায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রয়েছে। আশপাশের অন্য জায়গাজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর অনেক ছবি। বঙ্গবন্ধুর পড়ার টেবিল এবং শোবার খাট দুটোর ওপরই সাদা কাপড় বিছানো। দেখে মনে হবে এখানে এখনো কেউ একজন থাকেন।
মন্তব্য করুন