কাতারের রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘আল উদেইদ’ বিমান ঘাঁটিতে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় বিকেলে এ হামলায় শহরের একাংশ কেঁপে ওঠে বিস্ফোরণের শব্দে। খবর রয়টার্স।
এই হামলার মধ্য দিয়ে ইরান পূর্বঘোষিত প্রতিশোধ বাস্তবায়ন করল। তেহরান আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে এর প্রতিক্রিয়ায় তারা উপযুক্ত জবাব দেবে। এখন সেই জবাব বাস্তবে রূপ নিয়েছে, আর দৃষ্টি ঘুরে এসেছে হোয়াইট হাউসের দিকে- প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করবেন?
এর আগে ইরানে মার্কিন হামলার পর ওই রাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন- যুক্তরাষ্ট্রের কোনও স্বার্থে হামলা চালালে তার ভয়াবহ জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আরও অনেক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে, যেগুলো এখনো ব্যবহার করা হয়নি। তার এই বক্তব্য বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।
ইরানের পাল্টা আঘাতের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে- ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন?
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, কিংবা কোনও মার্কিন নাগরিক হতাহত না হন, তাহলে ট্রাম্প হয়তো আপাতত সংযম দেখাবেন- এই আশায় যে ইরান এখন আলোচনায় আগ্রহ দেখাবে। এমন কৌশল ২০২০ সালের জানুয়ারিতেও দেখা গিয়েছিল, যখন কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধে ইরান ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। শতাধিক সেনা আহত হলেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাল্টা হামলায় না গিয়ে উত্তেজনা কমানোর পথ নেয়।
তবে এবার পরিস্থিতি আরও জটিল। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে এবং কংগ্রেসে অনেকেই চাইছেন- এই হামলার কড়া জবাব দেওয়া হোক। আর যদি জানা যায়, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের জানমালের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়বে পাল্টা আঘাত হানার।
এদিকে মার্কিন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প আগের প্রেসিডেন্টদের মতো নন। তিনি হুমকি দিলে তা বাস্তবায়ন করেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-তিনি কি এমন একটি যুদ্ধের পথে হাঁটবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক অবস্থানকে বিপদের মুখে ফেলবে? এমনকি তার নিজ দলের অনেকেই এমন পদক্ষেপের পক্ষে নন।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ট্রাম্পের দিকে। একদিকে হুমকি বাস্তবায়নের চাপ, অন্যদিকে নতুন এক যুদ্ধ এড়ানোর কৌশল- এই টানাপোড়েনের মধ্যেই প্রেসিডেন্টকে নিতে হবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি।
এই মুহূর্তে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ হোয়াইট হাউসের বন্ধ দরজার দিকে- কখন খুলবে, কী ঘোষণা আসবে। সেটি কি হবে প্রতিশোধের অগ্নিশিখা, নাকি কূটনৈতিক সংযমের শীতল পরশ? সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন এটাই।
মন্তব্য করুন