কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দক্ষিণ ও পশ্চিম গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু

মধ্য গাজায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক। ছবি : সংগৃহীত
মধ্য গাজায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ২১তম মাসে এসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ ও পশ্চিম গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ও সেনাবাহিনী শহরে ঢুকে পড়ে, যেখানে এর আগে কখনো স্থল অভিযানের ঘটনা ঘটেনি। ইসরায়েলি গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও, ইসরায়েল আর্মি রেডিও জানিয়েছে, গোতানি ব্রিগেড নামের একটি ইউনিট দেইর আল-বালাহর দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করেছে। এর আগে রাতভর ওই এলাকায় বিমান হামলা ও আর্টিলারি গোলাবর্ষণ চালানো হয়।

প্রাথমিকভাবে একটি মাত্র ব্রিগেড এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে এবং এই অভিযান কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযানের আগের দিন রোববার, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা খালি করতে ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দেয় এবং দেইর আল-বালাহ শহরের আকাশে হাজার হাজার সতর্কবার্তা ছুড়ে দেয়। তবে কোথায় সরে যেতে হবে সে বিষয়ে কোনো বিকল্প পথ বা আশ্রয়স্থলের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র জানান, ‘এই এলাকায় শত্রুদের ক্ষমতা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসে জোরালো অভিযান চলছে এবং ইসরায়েল এমন জায়গাগুলোতেও প্রবেশ করছে, যেখানে আগে কখনো অভিযান পরিচালিত হয়নি।’

ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এর আগে দেইর আল-বালাহে স্থল অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরে দ্বিধা ছিল। ধারণা করা হয়, সেখানে এখনো জীবিত কিছু ইসরায়েলি জিম্মি থাকতে পারে, যাদের জীবন হুমকিতে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এই এলাকা এড়িয়ে চলছিল সেনাবাহিনী।

জিম্মিদের পরিবারের একটি ফোরাম সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই অভিযানে উদ্বিগ্ন এবং সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। দেইর আল-বালাহ অভিযানে জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি কতটা বিবেচনায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চান তারা।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সহায়তাকারী সংস্থা এমএপি জানিয়েছে, ইসরায়েল সোমবার সকালে দেইর আল-বালাহ এলাকায় স্থল ও বিমান হামলা শুরু করে। সংস্থার গাজা কার্যালয়ের মুখপাত্র মাই এলাওয়াওদা জানান, অবস্থা চরম সংকটজনক। আমাদের অফিসের চারপাশে গোলাবর্ষণ চলছে, মাত্র ৪০০ মিটার দূরে সামরিক যান মোতায়েন রয়েছে।

সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন পালিয়ে আসা কিছু বাসিন্দা। কেউ বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়ে দেখি, ট্যাঙ্কগুলো সরাসরি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। কোনো পূর্বাভাস ছিল না।’ চার সন্তান হারানো এক ফিলিস্তিনি মা বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে তিনবার গৃহচ্যুত হয়েছি। আজ আবার নতুন করে শুরু।’

অন্য এক বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু আমুস বলেন, ‘রাতভর গোলাবর্ষণ আর বোমা হামলা হয়েছে আমাদের ওপর। তারা শুধু বলেছে, চলে যাও, কিন্তু কোথায় যাব?’

আত্তেফ আবু মুসা নামের এক বাসিন্দা জানান, ‘এই তাঁবুটি আমি ১৩ বার খুলে আবার গুটিয়েছি। আজ রাতটা ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর।’ আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা শুধু গায়ের কাপড় পরে পালিয়েছি। ক্ষুধা, অনাহার, হত্যা, গৃহচ্যুতি—আমরা আর পারছি না। আমাদের বাচ্চারা আমাদের চোখের সামনে মরছে। এটা আর সহ্য হচ্ছে না।’

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচআর জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন করে জারি করা সরে যাওয়ার নির্দেশনা গাজার মানুষের টিকে থাকার যেটুকু উপায় ছিল, তা আরও একবার ধ্বংস করে দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নির্দেশনার সময় দেইর আল-বালাহ এলাকায় প্রায় ৫০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ ছিলেন, যাদের অনেকেই আগে থেকেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিল।

এই অঞ্চলে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার মানবিক গুদাম, চিকিৎসা কেন্দ্র ও পানি সরবরাহ স্থাপনাও রয়েছে, যা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে সতর্ক করে সংস্থাটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল স্কুল শিক্ষিকার লাশ

স্বাস্থ্যখাত ও ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল আ.লীগ : রহমাতুল্লাহ

সমালোচনার মুখে গ্রাফিতি মোছার ব্যাখ্যা দিলেন জেলা প্রশাসক

‘আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি’ ডায়েরিতে লিখেছিলেন প্রিয়াঙ্কা

ছিনতাইকারীদের ধাক্কায় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

জাপা কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা বিএনপির

বছরজুড়েই রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবন-আদর্শ চর্চা অব্যাহত রাখার আহ্বান জামায়াতের

মুন্সীগঞ্জে মদ্যপানে ৪ জনের মৃত্যু

উচ্ছেদ আতঙ্কে মালপাহাড়িয়ারা

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যা বললেন অপু বিশ্বাস

১০

গাজীপুরে বাসচাপায় নওগাঁর ডিবির ওসি নিহত

১১

রিজানের সেঞ্চুরি, সামিউনের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলো যুবারা

১২

‌‘মন্ত্রী-সচিব হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, সারওয়ার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল’

১৩

জিয়ার সৈনিকের লাশ পড়ে ছিল শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গায় : রিজভী

১৪

আগামী নির্বাচনে ইসলামী রাজনৈতিক শক্তিকে মানুষ ভোট দেবে : ডা. তাহের

১৫

নতুন জার্সি স্পনসরশিপ বিসিসিআইয়ের জন্য আশীর্বাদ!

১৬

ইউনূস কার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন : এমএম আকাশ

১৭

হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিল খানকা

১৮

ফের মাস্টার্সের সুযোগ চান সাবেক সমন্বয়কসহ ৬ নেতা

১৯

হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

২০
X