এখন সময় এসেছে দখলের। এমন এক বিতর্কিত মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। গাজাকে 'সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দেশ ভাগ করে মাঝখানে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা চিরতরে বাদ দিতে হবে। তার এই বেফাঁস মন্তব্যের পর বিভিন্ন দেশের রোষানলে পড়েন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এর আগে গত মাসেই অস্ট্রেলিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে, মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজায় স্পেন থেকে পাঠানো হয়েছে ১০০ জাহাজের বহর। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই উস্কানিমূলক মন্তব্যে সবচেয়ে কড়া বার্তা এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে। খবর বিবিসি ও দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের।
আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর দখল আমিরাতের কাছে রেড লাইন। আব্রাহাম চুক্তি হলো ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনের একটি উপায়। পশ্চিম তীর দখলে ইসরায়েলের যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অর্থ হলো রেড লাইন অতিক্রম করা এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করা। মূলত ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমেই আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। তখন শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বহু দিনের স্বপ্নই ছিল ফিলিস্তিনের ভূমি পুরোপুরি দখল করে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আর এখন স্মোট্রিচ যে মানচিত্র দেখিয়েছেন তাতে দেখা যায়, পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহর—জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন। এতে বেথলেহেমসহ বহু ফিলিস্তিনি এলাকা বাদ পড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করবে।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি গড়ে তুলেছে, যেখানে সাত লাখেরও বেশি ইহুদি বসবাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছে আনুমানিক ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ ধরা হলেও ইসরায়েল তা অস্বীকার করে আসছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সরকার পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে, যা কার্যকর হলে পুরো অঞ্চলটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়বে।
নেতানিয়াহুর বর্তমান সরকারের বহু মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন দখলের পক্ষে। তবে আমিরাতের সতর্কবার্তার পর আন্তর্জাতিক মহল এখন তাকিয়ে আছে ইসরায়েল কি সত্যিই পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে, নাকি তীব্র চাপের মুখে পিছিয়ে আসবে।
মন্তব্য করুন