বিদেশি জিপিএস সিস্টেম অনিরাপদ মনে করছে ইরান। দেশটি জাতীয় স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দিচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের ভয় চূড়ান্ত রূপ নেয়। ওই যুদ্ধে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ নেতাদের খুঁজে বের করে হত্যা করে মোসাদের গোয়েন্দা ও এজেন্টরা।
ইরানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান মঙ্গলবার বলেছেন, বিদেশি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) নিরাপদ নয় এবং বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশটিকে নিজস্ব জাতীয় স্যাটেলাইট নেভিগেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের নেতৃত্বদানকারী ওয়াহিদ ইয়াজদানিয়ান বলেন, ইরানে জিপিএস ব্যাঘাতের কারণ দেশীয় নেভিগেশন স্যাটেলাইটের অনুপস্থিতি। ইরানে বর্তমানে নেভিগেশন স্যাটেলাইটের অভাব রয়েছে। আমরা বিদেশি সিস্টেমের ওপর নির্ভর করছি।
তিনি বলেন, কোনো বৈশ্বিক নেভিগেশন সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ হতে পারে না। চূড়ান্ত সমাধান হলো একটি দেশীয় স্যাটেলাইট নেভিগেশন নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করা।
ইয়াজদানিয়ান আরও বলেন, নগর পরিবহন থেকে শুরু করে ট্রেন, জাহাজ ও বিমানের নেভিগেশন অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সুরক্ষিত করার জন্য দেশটির নিজস্ব অবকাঠামো তৈরি করা দরকার।
তবে আশার কথাও শোনান ইয়াজদানিয়ান। তিনি মহাকাশ প্রযুক্তির বৃহত্তর ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ইরানের পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটগুলো ইতিমধ্যে এমন চিত্র সরবরাহ করে যা নীতিনির্ধারকদের ফসলের ফলন অনুমান করতে এবং পানি সম্পদ পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
ইয়াজদানিয়ানের মতে, স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে সরকার গম, বার্লি, ভুট্টা এবং আলু উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করতে এবং আমদানি বা দেশীয় ক্রয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছে।
ইরান যখন উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহাকাশ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই মন্তব্য করা হলো। ইরানি মহাকাশ সংস্থার প্রধান এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, তেহরান ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে চারটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত চাবাহারে নতুন মহাকাশ বন্দরের কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
পরিকল্পিত উৎক্ষেপণের মধ্যে রয়েছে জাফর, পায়া এবং কাউসার আর্থ পর্যবেক্ষণ উপগ্রহের দ্বিতীয় মডেল, সোলেইমানি ন্যারোব্যান্ড যোগাযোগ নক্ষত্রপুঞ্জের পরীক্ষামূলক ইউনিট।
পশ্চিমা দেশগুলো বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইরানের উপগ্রহ কর্মসূচি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার হাতিয়ার হতে পারে। তবে তেহরান বলছে, তাদের কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। উপগ্রহগুলো যোগাযোগ, কৃষি এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণের মতো বেসামরিক সক্ষমতা রাখে। কোনো সামরিক উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করা হবে না।
মন্তব্য করুন