কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাশ্মীরে গ্রেপ্তার ও উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া

কাশ্মীরে হামলায় সন্দেহভাজনদের কোনো অপরাধ প্রমাণ ছাড়াই রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সেনারা। ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মীরে হামলায় সন্দেহভাজনদের কোনো অপরাধ প্রমাণ ছাড়াই রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সেনারা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের প্রাণঘাতী হামলার পর পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও প্রকৃত হামলাকারীদের চেয়ে বরং নিরীহ সাধারণ মানুষই যেন হয়ে উঠেছে প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু।

হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ভারত সরকার কাশ্মীরজুড়ে যে ধরপাকড় ও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনারা, তা ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এএফপির বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি তথ্যমতে, সন্দেহভাজনদের খুঁজতে গিয়ে ভারতীয় সেনারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তি নেই। বরং ‘তথ্য সংগ্রহের নামে’ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।

রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি ও তাদের স্বপ্ন

সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যদের কোনো অপরাধ প্রমাণ ছাড়াই রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলাতক আসিফ শেখের বোন ইয়াসমিনা বলেন, আমার ভাই যদি দোষীও হয়, তবে পুরো পরিবার কেন শাস্তি পাবে? আমরা তো তিন বছর ধরে ওকে দেখিইনি। এই বাড়ি শুধু ওর একার নয়।

এই ধ্বংসযজ্ঞ কেবল সম্পত্তি ধ্বংস নয়, বরং মানুষের জীবনের ওপর এক গভীর আঘাত। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, পরিবারগুলো আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছে না। এসব কর্মকাণ্ডে পুরো একটি জনগোষ্ঠীকে ‘দোষী’ বানিয়ে দমন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়, সিন্দু পানি চুক্তিও স্থগিত

হামলার ঘটনার পর ভারত সরকার প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় উসকানিমূলক নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো সিন্দু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের এক কূটনৈতিক সমঝোতা ছিল।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিবাদ : কাশ্মীরিদের দেওয়া হচ্ছে সম্মিলিত শাস্তি

কাশ্মীরের একজন ফেডারেল সংসদ সদস্য আগা রুহুল্লাহ বলেন, এই ধরনের প্রতিক্রিয়া কেবল হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো কাশ্মীর ও কাশ্মীরিদের সম্মিলিত শাস্তি। এতে করে আস্থা, স্থিতি এবং শান্তির পথ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

পুলিশ দাবি করছে, এসব গ্রেপ্তার আসলে ‘তথ্য সংগ্রহ’। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে আটক করে দিনের পর দিন রাখা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের জানানো হচ্ছে না কোথায় রাখা হয়েছে, কেন রাখা হয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এগুলো গ্রেপ্তার নয়, কেবল জিজ্ঞাসাবাদ। অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, আবার অনেককেই নতুন করে ডাকা হচ্ছে।

এই তথাকথিত জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াটি কেবল আইনি প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন নয়, বরং মানবাধিকারের সরাসরি চরম লঙ্ঘন বলেই অভিহিত করছেন অধিকার সংগঠনগুলো।

সীমান্তে আতঙ্ক, ভবিষ্যতের শঙ্কা

কাশ্মীর সীমান্তবর্তী পাঞ্জাবের গ্রামগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দাওকে ও রাজতাল গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ শঙ্কিত।

৬৫ বছর বয়সী হারদেব সিং বলেন, যুদ্ধ হলে উভয় দেশই ধ্বংসের মুখে পড়বে। হামলায় যারা মারা গেছেন, তারা তো আর ফিরে আসবেন না। এখন আমাদের উচিত শান্তি ও সংলাপে ফিরে যাওয়া।

৭৭ বছর বয়সী সীমান্তবাসী সর্দার লাখা সিং বলেন, গ্রামের তরুণদের বলছি, যা হবার তা হবেই। আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনেক কিছু। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপ জয়ের পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন রোনালদো!

জুলাই সনদ নিয়ে উদ্ভূত সংকটের সমাধান সরকারকেই করতে হবে: গণতন্ত্র মঞ্চ

‘চ্যাম্পিয়ন’ পিএসজিকে হারিয়ে বায়ার্নের টানা ১৬ জয়

কোর্তোয়ার বীরত্বেও রক্ষা পেল না রিয়াল মাদ্রিদ

নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামছে জামালরা, যেভাবে মিলবে টিকিট

‘ধানের শীষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশ নিতে হবে’

আমজনতার দলের নিবন্ধন না পাওয়া নিয়ে রাশেদের স্ট্যাটাস

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসমাবেশের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

মনোনয়ন পাওয়ার একদিন পর স্থগিত—কে এই কামাল জামান মোল্লা

ঢাকায় আসছেন না ড. জাকির নায়েক

১০

সভা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বিএনপি কর্মীর

১১

মুচলেকায়  মুক্তি / ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশ দিল শিক্ষার্থীরা 

১২

মেডিক্যাল শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর

১৩

উত্তরাধিকার সূত্রে ধানের শীষের প্রার্থী যারা

১৪

নভেম্বরের ৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৩৫০ মিলিয়ন ডলার

১৫

এশিয়া কাপ বিতর্কে বড় শাস্তি পেলেন পাকিস্তানি পেসার

১৬

‘তত্তাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল রায়ের অভিশাপ ভোগ করছে পুরো জাতি’

১৭

আশাশুনিতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল

১৮

কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগার দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত : তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ

১৯

কেশবপুর আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে চান শ্রাবণ

২০
X