কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং এর ফলে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে হামলা চালানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
দুই দেশের উত্তেজনার সাথে সাথে সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। একে অপরকে উসকানি দাতা হিসেবে দোষারোপ করছে ভারত ও পাকিস্তান।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় পাশের মানুষ এখন বাঙ্কার নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে, এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা এহসান-উল-হক শামি জানান, পেহেলগামের ঘটনার পর পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে।
তিনি বলেন, রাতে আকস্মিকভাবে গোলাগুলি শুরু হলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। প্রথমে আমি আমার বৃদ্ধ মাকে বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়ে যাই, কারণ তিনি হাঁটাচলা করতে অক্ষম।
শামি আরও জানান, ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর, তিনি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বাঙ্কার পরিষ্কার করেছেন যাতে গোলাগুলি চললে তা ব্যবহার উপযোগী থাকে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলাগুলি সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং এখানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুপওয়ারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারা সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত কুপওয়ারায় গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি, তবে সীমান্তের খুব কাছাকাছি যারা বাস করছেন, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগতভাবে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নির্মাণ বা সংস্কার শুরু করেছেন। পীরজাদা সৈয়দ, একজন বাঙ্কার নির্মাতা বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি। অতীতে কৃষিকাজের অভাবে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আমরা চাই আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন, কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটতে পারে। তাই, তারা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নির্মাণ করছেন, যাতে কোনো বিপদ ঘটলে সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।
উরি সেক্টরের বাসিন্দাদেরও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও, স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাঙ্কারে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।
ভাটগ্রানের বাসিন্দা মহম্মদ কুদ্দুস জানান, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, তবে দরিদ্ররা কোথায় যাবে? এখন আমরা এই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করব।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ৩,৩২৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৭৪৪ কিলোমিটার। এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই সীমান্তকে সিজফায়ার লাইন বা যুদ্ধবিরতি রেখা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু দুই দেশই একে নিয়ন্ত্রণ রেখা বা এলওসি বলে পরিচয় দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সিজফায়ার চুক্তির আগে ভারত সরকার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ১৯ হাজারেরও বেশি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নির্মাণ করেছে।
এখন, উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাশ্মীরের মানুষ বাঙ্কার নির্মাণ এবং সংস্কার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জীবন রক্ষার্থে তারা এই বাঙ্কারগুলো পরিষ্কার ও প্রস্তুত করছে, যাতে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন