দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক ও সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের উদ্দেশে এক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তার ভাষায়, ভারত ও পাকিস্তান— দুজনই প্রতিবেশী, তাই সহাবস্থান করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এখন ভারতেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি শত্রুতা বজায় রাখবে নাকি সুসম্পর্কের পথে হাঁটবে।
শেহবাজ মনে করিয়ে দেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হলে দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই বাস্তব অর্থে এগোতে পারবে না। তিনি কঠোরভাবে বলেন, ‘কোটি কোটি কাশ্মীরির রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সমাবেশে বক্তব্য দেন শেহবাজ শরিফ। সেখানে তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সাফল্য, বৈশ্বিক সংকট এবং দেশের সাম্প্রতিক অর্জনের কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়েও দেন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এ খবর প্রকাশ করেছে।
শেহবাজ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আলোচনার পথ অবশ্যই খোলা আছে, তবে তা হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। আমরা ইতোমধ্যেই চারটি যুদ্ধ করেছি, আর এসব যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার নষ্ট হয়েছে। অথচ সেই অর্থ ব্যয় করা যেত স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক নির্মাণে কিংবা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে।’
চলতি বছরের মে মাসেই ভারত-পাকিস্তান আবারও বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের ভেতরে ভারতীয় বিমান হামলার পর পাল্টা অভিযান চালায় ইসলামাবাদ। ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ (লোহার দেয়াল) নামের ওই অভিযানে পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল ব্যয়বহুল ফরাসি রাফালে জেটও।
প্রায় ৮৭ ঘণ্টা স্থায়ী সেই সংঘাতে উভয় দেশই প্রাণহানি ও বিপুল সম্পদের ক্ষতির শিকার হয়। পরিস্থিতি এতটাই তীব্র হয়েছিল যে পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ।
কাশ্মীরের পাশাপাশি শেহবাজ গাজার পরিস্থিতিও টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই রক্তক্ষয় শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি আমাদের এই অঞ্চলকেও দীর্ঘদিন প্রভাবিত করবে, চাই বা না চাই।’
শেহবাজ শরিফ আবারও জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু শর্ত একটাই— ন্যায্যতা ও সম্মান বজায় রেখে, সমতার ভিত্তিতে। তার ভাষায়, ‘ন্যায্যতা ও সম্মান দিয়েই যে কোনো আলোচনার পথ চলা উচিত।’
মন্তব্য করুন