সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। শুরুতে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত হয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দীর্ঘ কর্মজীবনে মার্কিন পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে সমালোচনাও কম নেই।
সাবেক এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এক মিটিংয়ে যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হচ্ছিল। ওই মিটিংয়ে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বাংলাদেশকে international basket case বলে অবহিত করেন।
তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এদিন ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের খবরে উল্লসিত হয়েছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৫ দিনের মাথায় ২০ আগস্ট খন্দকার মোশতাককে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিহিংসাপরায়ণ কিসিঞ্জার এতটাই উল্লসিত হন যে, তিনি বলেন- ‘মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের প্রতিও সহানুভূতিও দেখান তিনি। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছানো, যাতে তারা ভরসা পায় যে আমরা তাদের চাহিদার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকব। তাদের স্বীকৃতি দেব।’
তার বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে তা হলো, ইন্দোচীনে সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা; বাংলাদেশে গণনিধনে ও পরবর্তী হত্যাকাণ্ডে উদ্দেশ্যমূলক যোগসাজশ; গণতান্ত্রিক চিলির ঊর্ধ্বতন সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত সম্পৃক্তি; গণতান্ত্রিক সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপ্রধান হত্যার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত যুক্ততা এবং পূর্ব তিমুরে গণহত্যার উসকানি ও তা কার্যকরকরণ।
হেনরি কিসিঞ্জার গত শতকের সত্তরের বেশ গোপনে দশকজুড়ে বেশ কদর্যপূর্ণ কাজ করেছেন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি লাওস ও কম্বোডিয়ায় অবৈধ বোমা হামলার পরিকল্পনা করেন। তিনি কেবল পরিকল্পনাই করেননি। তার এ পরকিল্পনাও বাস্তবায়ন হয়েছিল।
এ ছাড়া ২০০২ সালে চিলির সামরিক সামরিক অভ্যুত্থানে (১৯৭৩) তার ভূমিকা জানতে চেয়ে দেশটির একটি আদালত কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে ২০০১ সালে ফ্রান্সের একজন বিচারক প্যারিসে কিসিঞ্জারের হোটেল কক্ষে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। ওই অভ্যুত্থানে বেশ কয়েকজন ফরাসি নাগরিক নিখোঁজ হয়েছিলেন।
একই সময়ে কিসিঞ্জার তার ব্রাজিল সফর বাতিল করেন। ওই সময়ে তাকে ব্রাজিলে আটক করা হতে পারে এমন গুঞ্জন ওঠে। এ ছাড়া সেখানে ‘অপারেশন কন্ডো’ নামের অভিযানের ব্যপারে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারেও শোরগোল শোনা যায়। এটি মূলত স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ ল্যাটিন আমেরিকার একনায়কদের যোগসাজশে পরিচালিত বিরোধী নির্বাসিত নেতাদের গুম করার জন্য পরিচালিত এক অভিযান। এ ঘটনায় আর্জেন্টিনার একজন বিচারক কিসিঞ্জারকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
মন্তব্য করুন