আধুনিক স্থল যুদ্ধে ন্যাটোর তৈরি ১৫৫-এমএম গোলা হয়ে উঠছে অন্যতম অস্ত্র। ফলে যুদ্ধরত দুই পক্ষের যার কাছে এ গোলার মজুত সবচেয়ে বেশি থাকবে তারাই কৌশলগতভাবে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। সম্মুখযুদ্ধে ১৫৫ মিলিমিটারের আর্টিলারি গোলার চাহিদা তাই এখন আধুনিক সমর ইতিহাসের সবচেয়ে তুঙ্গে রয়েছে।
ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা ঠিক যতদিন এ গোলা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবে ততদিন রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে জেলেনস্কি বাহিনী। এমনকি অবরুদ্ধ গাজায় হামাসের অবকাঠামো ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসেও এ গোলার ব্যবহার করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স প্রথম এ গোলার উদ্ভাবন করে। তারপর ন্যাটোর সহযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে এ গোলার আধুনিকায়ন করা হয়। নিখুঁত টার্গেট আর ওয়ারহেডের ধ্বংস ক্ষমতার কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সেনাবাহিনীর কাছে যত ধরনের গোলা রয়েছে তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে কার্যকর বলে পরীক্ষিত।
উচ্চতায় দুই ফুট ও ৪৫ কেজি ওজনের এই গোলার পুরুত্ব ১৫৫ মিলিমিটার। উচ্চমাত্রায় বিস্ফোরক বহনের সামর্থ্য আর লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানার সক্ষমতার কারণে ক্রমেই বাড়ছে ১৫৫-এমএম গোলার চাহিদা।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এ গোলাকে নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক পরিবর্তনও করে নিচ্ছে কোনো কোনো দেশ। নরওয়ের প্রতিরক্ষা কোম্পানি ন্যামো ও মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তত্ত্বাবধানে র্যামজেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ গোলাকে আরও উন্নত ও নিখুঁত করা হচ্ছে। এ সংস্করণে অক্সিজেন ব্যবহারের কারণে এটি আরও তেল সাশ্রয়ী ও ৯০ মাইল পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অব্যাহত যুদ্ধের কারণে ১৫৫-এমএম গোলার দামও বাড়ছে হু হু করে। ২০২০ সালেও প্রতিটি গোলার দাম ছিল ২ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার বা আড়াই লাখ টাকা। বর্তমানে প্রতিটি ১৫৫-এমএম গোলার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪০০ ডলার বা ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামার মধ্যে ১৫৫-এমএম গোলার উৎপাদনও বৃদ্ধ করেছে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো। ২০২৫ সালের মধ্যে মাসে ৮০ হাজার ১৫৫-এমএম গোলা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়লে তাতে এগিয়ে থাকতেই এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন।
মন্তব্য করুন