বিদেশি ফল রামবুটান চাষ করে সারা দেশে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকার আশরাফ উদ্দিন ও শেখ মামুন মিয়া। এ ফল চাষ করে সফল হওয়ায় এখন তাদের উৎপাদিত চারা যাচ্ছে সারা দেশে। কৃষি বিভাগ বলছে, রামবুটান চাষ সম্প্রসারণে কাজ করবে তারা।
রামবুটান ফলটি লিচু পরিবারের। এটি চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়। ফলটির খোসা হালকা চুলের মতো আবরণে ঢাকা। মালয় ভাষায় ‘রামবুট’ শব্দের অর্থ চুল। তাই অনেকে একে হেয়ারি লিচু, কেউ কেউ ফলের রানিও বলেন। এই ফল চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূল।
ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের গোয়ারী গ্রাম। এ গ্রামেই চাষ করা হয়েছে চোধ জুড়ানো ও খেতে সুস্বাদু বিদেশি ফল রামবুটান। প্রত্যন্ত গ্রামে সাড়ে ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে এই ফলদ বাগান করেছেন দুই বন্ধু উদ্যোক্তা শেখ মামুন ও আশরাফ উদ্দিন। মামুন পেশায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও আশরাফ উদ্দিন শিক্ষক। নিজের পেশার পাশাপাশি ‘তাইফ এগ্রো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তাতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন দেশি-বিদেশি ফল।
তাদের বাগানে ২১২টি রামবুটান গাছ ছাড়াও দেশি-বিদেশি আরও ২০ জাতের ফলের গাছ রয়েছে। সুস্বাদু হওয়ায় থাইল্যান্ড থেকে ৪০০ রামবুটান গাছের চারা আমদানি করে ২০২০ সালে এই বাগান গড়ে তোলেন তারা। শুরুতে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে গাছে মরক দেখা দেয়। পরে তারা জৈব সার ব্যবহার শুরু করেন। এতেই সফলতা মেলে। বর্তমানে ২১২টি রামবুটান গাছেই ফল ধরেছে।
রামবুটান দেখতে দর্শনার্থীরাও আসেন, বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে যান। বাগানের ২১২টি গাছ থেকে এবার ১০ টন ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন দুই উদ্যোক্তা। যার বাজারমূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি। বছরে জুলাই থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পাকা টসটসে রামবুটান বিক্রি যোগ্য হয়।
শ্রীপুর থেকে রামবুটানের চারা নিতে আসা জেবরিন আক্তার বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে জানতে পারি বিদেশি ফল রামবুটান ভালকায় উৎপাদিত হচ্ছে, তা দেখে শেখ মামুনের কাছ থেকে কিছু ফল খেয়ে স্বাদ পাওয়ায় ২ হাজার টাকা করে ২০টি রামবুটানের চারা কিনে নিই। একই দিনে শেরপুর থেকে রামবুটানের চারা কিনতে আসা ওমর ফারুক বলেন, তার এক ছোট ভাই মালয়েশিয়া থাকেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছেন ভালকার গোয়ারী গ্রামে রামবুটান উৎপাদন হয় এবং চারা বিক্রি করা হচ্ছে। তার পরামর্শে এখানে চারা নিতে আসি।
বাগানমালিক শেখ মামুন বলেন, সাড়ে ছয় একর জমিতে প্রথমে আমরা পেয়ারা, কুল, পেঁপে চাষ করি। এসব ফসল চাষ করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হই। পরে চিন্তা-ভাবনা করি বিদেশি কিছু দামি ফল চাষ করা যায় কি না। আমরা ভাতিজা শুভ থ্যাইল্যান্ড ঘুরতে গিয়ে দেখে সেখানে ছোট ছোট গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে রামবুটানের ফল। সে বিষয়গুলো আমার সঙ্গে শেয়ার করে। তখন আমি রামবুটান নিয়ে গবেষণা করে দেখি থাইল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে। পরে থাইল্যান্ড থেকে চারা আমদানি করে রোপণ করি। চারা রোপণের দেড় বছর পর গাছে অল্প অল্প ফল আসতে থাকে। পরের বছর একেকটা গাছে ৮ থেকে ১০ কেজি ফল আসতে শুরু করে। চারা লাগানোর সাড়ে চার বছর পর এখন একেকটি গাছে ১০০ থেকে ১২০ কেজি ফল আসছে। গত বছর রামবুটান ফল ১৮শ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এ বছর ১৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকতা নুসরাত জামান বলেন, ভালুকার মাটি ও আবহাওয়া যে কোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। দেশীয় ফলের পাশাপাশি এখানে রামবুটান,আঙুর চাষ হচ্ছে। ফল চাষের জন্য অম্লীয় মাটি বেশি দরকার। রামবুটান বিদেশি ফল। এটি এখানে সফলভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের যতটুকু কারিগরি জ্ঞান দরকার, আমরা তা দিয়ে যাচ্ছি। এ ফলটাকে কীভাবে মিষ্টান্ন বাড়ানো যায়, কীভাবে পরিচর্যা করতে হয়, তা শিখিয়েছি। গত বছর ফলন কম ছিল। এ বছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কেঁচো সারের একটা প্রদর্শনী তাদের দেওয়া হয়েছিল। কেঁচো সার ব্যবহার করলে রামবুটান ফলের মিষ্টতা এবং মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে। তিনি আরও বলেন, রামবুটান ফল নিয়ে হর্টিকালচার সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কথা বলেছি। তারা চারা উৎপাদন করে দিতে পারলে এ ফল সারা দেশে সম্প্রসারণ করা যাবে।
মন্তব্য করুন