সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরি করছেন গোলাম সরোয়ার। তার দুই ভাই দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে ছিলেন। গোলাম সরোয়ার তার অবৈধ আয়ের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে থাকা ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন। সেই টাকা রেমিট্যান্স হয়ে দেশে এসে বৈধ হয়ে যেত। এভাবেই তিনি ইনকাম ট্যাক্স ফাইল খোলেন।
এভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন গোলাম সরোয়ার। অবৈধ আয়ে তিনি সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ শতক জমির ওপর বানিয়েছেন ছয়তলা বাড়ি। পাশের ৫ শতক জমির আরও একটি প্লট রয়েছে তার। সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের সিন্ধুরিয়া মৌজায় আছে ২৬ শতক জমিতে টিনশেড বাড়ি। বাড়ির চারপাশে বাগান করা। সঙ্গে পুকুর। এ ছাড়া গ্রামে রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার শ্যামলীর আবাসিক পল্লিতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট। হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শেয়ার। এ ছাড়া নামে-বেনামে দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরি করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই অবৈধ সম্পদ গড়েছেন সাবেক সার্ভেয়ার গোলাম সরোয়ার। এখন পরিবার নিয়ে থাকেন বাবর রোডের ১৩এ/৬বি. ব্লক-বির এইচ, আই ইউসুফজাই কটেজে। তার এই ফ্ল্যাটটির মূল্য কয়েক কোটি টাকা। চলেন ব্যক্তিগত গাড়িতে।
সরেজমিন দেখা যায়, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাপাইন রোড সংলগ্ন শাহীবাগ মহল্লার ডগরমুরা এলাকায় রয়েছে একটি ছয়তলা বাড়ি। বাড়ির সামনে লোহার গেট লাগানো। তবে বাড়ির সামনে কোনো হোল্ডিং নম্বর নেই। পাশের বাসার নম্বর: ৩০/১০৬। চাপাইন রোড ধরে একটু এগোলে
মডেল কলেজ রোড। এই রোডে ঢুকতে ৫ শতক জমির একটি প্লট। প্লটের এক পাশে একটি মুদি দোকান। বাকি জায়গায় কিছু গাছ লাগানো। ভেতরে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার জায়গা করা আছে। প্লটটির মালিক প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার। মুদি দোকানটি পরিচালনা করেন গোলাম সরোয়ারের ভাই মো. মামুনুর রশিদ। কয়েক বছর আগে ৫ শতক জমির এই প্লটটি তিনি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। পরিচয় গোপন করে কথা হয় মো. মামুনুর রশিদের সঙ্গে। মামুন দাবি করেন, দোকানটি তার নিজের।
সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে গোলাম সারোয়ারের রয়েছে ২৬ শতক জমির ওপরে পুকুরসহ একটি বাড়ি। বাড়ি ও পুকুর বাদে বাকি জমি কৃষি। সেখানে চাষাবাদও হয়। তিনি এই জমিটি কিনেছেন ৭২ লাখ টাকায়। গ্রামে নির্মাণাধীন রয়েছে তার এক বিঘা জমির ওপরে ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়ির প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও গ্রামের বাড়িতে রয়েছে কৃষি-অকৃষি জমি। এ ছাড়া রাজধানীর শ্যামলীতে বাবর রোডে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ৩ কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে বাবর রোডের ১৩এ/৬বি. ব্লক-বির এইচ, আই ইউসুফজাই কটেজে গোলাম সরোয়ার সপরিবারে বাস করেন। এ ছাড়া মানিকগঞ্জে ক্লিনিকের শেয়ারসহ নামে-বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘আমার যা সম্পদ আছে সব আমার ইনকামট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। আমি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে ৩৪ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। সেই টাকায় এই সম্পদ।’ শ্যামলীর ফ্ল্যাটের বিষয়ে বলেন, ‘আমার বিদেশ থেকে টাকা আসছিল। সেই টাকা দিয়ে কিনেছি।’
হুন্ডির বিষয়ে অস্বীকার করে গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আসত। আমার ভাই ব্যাংকে টাকা পাঠাত। সেই টাকা তুলি নিয়ে ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে দেখিয়ে আমি এগুলো কিনেছি। শ্যামলীতে আমার একটি ফ্ল্যাট, ৩২ বা ৩৪ লাখ টাকায় কিনেছি।’ সাভারের ছয়তলা বাড়ির বিষয়ে বলেন, ‘ওসব ফাইলে দেখানো আছে।’ ফাইলে যাই থাকুক আপনি কীভাবে করেছেন—এমন প্রশ্নে বলেন, ‘ওটা ১ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনা। এরপর আইজ একটু কাইল একটু করে করেছি।’ সাভারের প্লটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওটাও ওভাবেই করা। এগুলো সব আমার ফাইলে দেখানো আছে। আমার আর কিছু নাই।’
সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে ২৬ শতক জমিতে পুকুরসহ বাড়ি এবং গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ওটা ১৬ শতক। আর গ্রামের বাপ-মার নামে। বাবা-মায়ের টাকা দিয়ে করা।’