বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
আতাউর রহমান ও রাফসান জানি
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যেন আকাশ ভেঙে পড়ল!

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফাইটার বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৯ আহত শতাধিক
যেন আকাশ ভেঙে পড়ল!

সোমবার দুপুর, সূর্য ঠিক মাথার ওপর। উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপরে তখন হেলেদুলে উড়ছিল একটি উড়োজাহাজ। ততক্ষণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ছুটির ঘণ্টা বেজেছে, বাসায় ফেরার অপেক্ষায় থাকা খুদে শিক্ষার্থীরা অবাক বিস্ময়ে দেখছিল খুব নিচ দিয়ে ছুটে আসা সেই উড়োজাহাজটি। ঘোর না কাটতেই যমদূত হয়ে সেটিই আছড়ে পড়ে ঠিক দোতলা একাডেমিক ভবনের সিঁড়ির সামনে। সঙ্গে সঙ্গেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে সেই আগুন স্কুল ভবন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের শরীরে। এ যেন হঠাৎই আকাশ ভেঙে পড়া।

স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজলেও অভিভাবকের হাত ধরে এই শিক্ষার্থীদের অনেকেরই আর বাড়ি ফেরা হয়নি। আগুন জড়ানো শরীর নিয়ে বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ির পর কারও নিথর দেহ গেছে মর্গে, কেউ চামড়া পোড়া দগদগে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতাল হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট পর্যন্ত আহাজারি আর স্বজন হারানোর বিলাপ। মর্মন্তুদ এমন ঘটনায় শোকের সাগরে ভাসছে পুরো দেশের মানুষ। দুচোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি কোনো বিবেকবান মানুষই।

বিপুল এই হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ভিডিও বার্তায় আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘এরকম এক কাণ্ড ঘটতে পারে, আমরা কেউ কল্পনা করিনি, কারও ধারণার মধ্যে ছিল না। কিন্তু অবিশ্বাস্য জিনিস আমাদের হঠাৎ করে গ্রহণ করতে হয়েছে।’ এ ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। স্থগিত করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় নানা কর্মসূচি।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এবং ফায়ার সার্ভিস। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০৪ জন। হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। যারা প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।

নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান সায়েদুর রহমান। তিনি আরও জানান, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যাদের মধ্যে প্রাথমিক মূল্যায়নে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান ছিল। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম উড়োজাহাজটি নিয়ে উড্ডয়ন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিধ্বস্ত বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উদ্ধারকর্মী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয়েছে, দোতলা সেই ভবনের প্রথম তলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হতো। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস। এর সঙ্গেই ছিল অধ্যক্ষের অফিস ও মিটিং রুম। ওই ভবনটির ঠিক সিঁড়ির সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এর একটি অংশ ভেতরে ঢুকে যায়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে সব শিক্ষার্থী বের হতে পারেনি।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, উড়োজাহাজটি অনেকটা নিচ দিয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল। হয়তো পাইলট সেটি কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবতরণের জন্য শেষ চেষ্টা করছিলেন। তবে কয়েকটি চক্করের পর সেটি স্কুল ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয়।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানটি আকস্মিক দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার (২১-৭-২০২৫) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়।

আইএসপিআর জানায়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শোক উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা শোক জানিয়েছেন।

যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা: ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিস। সেখানে নিজের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র নিতে এসেছিলেন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্র মো. তানভীর। তিনি কালবেলাকে বলেন, বিআরটিএ থেকে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন। ওই সময় ঠিক মাথার ওপর দেখেন অনেকটা ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ অনেকটা হেলেদুলে উড়ছে। বিকট শব্দ হচ্ছিল। সেটি তখন বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া বা ল্যান্ড করার জন্য ফাঁকা জায়গা খুঁজছিল বলে মনে হচ্ছিল।

তিনি বলেন, মাথার ওপরে এমন শব্দে তার মতো অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে (মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অদূরে) দাউদাউ আগুন দেখতে পান। তখন বুঝতে পারেন ওই বিমানটিই আছড়ে পড়েছে।

মাইলস্টোন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সবুজ মিয়া জানান, বিমানটি স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশমুখে বিধ্বস্ত হয়। ছুটির পর শিক্ষার্থীরা সেখানেই জড়ো হয়। কিছু শিক্ষার্থী এরই মধ্যে বের হয়ে গিয়েছিল, তবে অনেকে তখনো ভবনের ভেতরেই ছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় এবং হুহু করে ধোঁয়া উঠতে থাকে।

একাদশ শ্রেণির একজন ছাত্র কাওসার বলেন, ফাইটার প্লেনটা যেখানে আছড়ে পড়ল, সেখানে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস, এখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেপেলেরা পড়াশোনা করে, ঠিক সেখানে প্লেনটা পড়েছে। তখন সেখানে শিক্ষার্থীরা ছিল। অভিভাবকরাও অদূরে গেটে অপেক্ষা করছিলেন। সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে তারা বাইরে এসেই দেখেন আগুন। হঠাৎ সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা দৌড়ঝাপ শুরু করে।

স্কুল ভবন থেকে কয়েক গজের মধ্যে এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মী আপন আহমেদ সেখানেই ছিলেন। তিনি বলেন, এইদিক দিয়ে প্রতিদিনই অনেক প্লেন এয়ারপোর্টে নামে। তখন প্লেনগুলো নিচু থাকে। কিন্তু ওই প্লেনটি খুব বেশি নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, যা দেখে তারা অবাক হন। এর পরই বিকট শব্দ আর আগুন দেখতে পান।

তিনি বলেন, ‘দৌড়াইয়া গিয়া দেখি, একজন প্যারাশুট নিয়া নামছে। বহু বাচ্চা আর তাদের গার্ডিয়ানরা আগুনে পুড়ছে। যে যেমনকে পারছে, তাদের উদ্ধার শুরু করে। আগুনের তাপ ছিল বেশি। এর জন্য ভবনের ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। তখনো উদ্ধারকারীরা আসে নাই।’

শুরুতে দিশেহারা ছিল সবাই: প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, বিমান বিধ্বংসের পর যে যেভাবে পারছে, উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে। তবে শুরুর দিকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে কেউ করণীয় সম্পর্কে কিছু বুঝতে উঠতে পারছিল না।

প্রত্যক্ষদর্শী জইমত আলী নামে স্থানীয় একজন বলছিলেন, আগুন দেখে দৌড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভয় পেয়ে যান, স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়াচ্ছিল। ৮টা-১০টা বাচ্চা আগুনের কুণ্ডলীতে আটকে গেছিল। কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষার্থী আর শিক্ষকরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন।

মাইলস্টোনের একাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী আসিকুর রহমান বলেন, বিকট শব্দ আর আগুন দেখে তারা বের হন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না।

কাঁকন আক্তার নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, প্লেনের একটা অংশ তো সিঁড়ির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। বাইরে থেকে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের আকুতি দেখলেও কিছুই করতে পারছিলেন না।

উদ্ধার তৎপরতায় মানবিক দৃষ্টান্ত: মাইলস্টোনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, শুরুতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর স্থানীয় লোকজন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। আশপাশের রিকশা-ভ্যান চালকরাও তাদের রিকশা-ভ্যান নিয়ে আসেন।

স্থানীয় কয়েক দোকানি জানান, খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসেন। ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। সেনা সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটেন। এরপর ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ এসে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয়।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, পুরো এলাকায় হাজার হাজার উৎসুক জনতার অবস্থান। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াতের জন্য ঘটনাস্থল থেকে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কেউ উদ্ধারকর্মীদের পানি সরবরাহ করছিলেন। কেউ আহতদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করছিলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্ধার তৎপরতা তদারকি করেন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।

উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে ব্রিফিং করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, বিমানবাহিনীর একটি এফটি-সেভেন বিজিআই ফাইটার এয়ারক্র্যাফট আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে আমাদের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুল ভবনে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং যখন হয়, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় যে জায়গায় টিচার্স রুমের সঙ্গে যে ল্যান্ডিং হয়, আঘাত করে, ওই জায়গায় বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিলেন।’

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস আনুমানিক দুপুর ১টা ৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের মোট ৯টি ইউনিট এখানে কার্যক্রম করেছে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘যারা নিহত, এখনো তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি, সময় লাগবে। আমাদের ধারণা, অধিকাংশই শিশু।’

হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা: দুর্ঘটনার পর দগ্ধদের উদ্ধার করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে। আবার এসব হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দগ্ধদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটছিল জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটি ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। তবে হঠাৎ করে একসঙ্গে এত পোড়া মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছিল হাসপাতালগুলো। এর মধ্যে ছিল আবার উৎসুক মানুষের ভিড়।

হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা

বিমান বিধ্বস্তের পর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। উদ্ধার অভিযানে নামে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অন্যরা। দগ্ধদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুন্সেলে করে নেওয়া হয় সিএমএইচসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে। এসব হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দগ্ধদের অনেককে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছোটে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। তবে হঠাৎ করে একসঙ্গে এত পোড়া মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছিল হাসপাতালগুলো। এর মধ্যে ছিল আবার উৎসুক মানুষের ভিড়।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় রাত ৮টা পর্যন্ত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ৮ জন, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন, সিএমএইচে ১৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ১৭১ জনের চিকিৎসা চলছিল।

নিহত ২০ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, সিএমএইচে ১২ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ জন মারা গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এই শোকের সময়ে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

প্রধান উপদেষ্টার পাশে থাকার আশ্বাস চার দলের

সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র বানানো সম্ভব নয় : হাসনাত কাইয়ূম

মামদানির নীতিকে ‘ননসেন্স’ বললেন নেতানিয়াহু

‘হানির লগে যুদ্ধ করি ত্রিশ বছর কাডাই দিছ’

ট্রাম্পের চাওয়ায় কোকা-কোলায় এলো পরিবর্তন

নকল সিগারেট তৈরির কারখানার সন্ধান, আটক ৪

ওষুধের দাম বেশি নিলে ছাড় নয়, ভোক্তা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি

সেই শিক্ষক মাহরিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি

২১ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা

১০

জবিতে জনপ্রশাসন সংস্কার ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গতিপথ শীর্ষক সেমিনার

১১

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি / ‘ছেলেকে সবসময় আইনস্টাইন বলে ডাকতাম’

১২

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেই বিদ্যমান সংকটের সমাধান সম্ভব : লায়ন ফারুক

১৩

শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া বাতিল বিমান চলবে না : রাশেদ প্রধান

১৪

সিলেট পরিবহন শ্রমিকদের দুগ্রুপের সংঘর্ষ

১৫

‘ওরাও তো আমার সন্তান, একা রেখে কী করে চলে আসি?’

১৬

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিশেষ প্রার্থনা  

১৭

স্বপ্ন পূরণের আগেই লাশ হয়ে ফিরছেন বগুড়ার আবু জাফর

১৮

দিল্লিতে এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে আগুন

১৯

লঘুচাপসহ আরও ১০ দিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

২০
X