ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার দুই দলের নেতাদের বৈঠকে ২৬টি আসন নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি আসন দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। আজ শনিবার আরেক দফা বৈঠক করে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, ‘জাপার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’ আলোচনা সফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ শনিবার আবারও দুই দলের নেতারা বসব। এ বৈঠকেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে।’ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আন্তরিক পরিবেশে জাপার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বদ্ধপরিকর।’
জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তিন ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ছিলেন। জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টির প্রাথমিক দাবি ছিল ৫০ আসন। তবে ৩৫ আসন পেলে সন্তুষ্ট থাকবেন তারা। বর্তমানে দলটির সংসদ সদস্য ২৩ জন। এর মধ্যে রওশনপন্থি চারজন নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথমে বর্তমান ১৯ আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়। তবে ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ২৬ আসনে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গুলশানে দলের কো-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিজ বাসায় দীর্ঘ সময় কথা বলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। রাত সাড়ে ১১টায় বৈঠক থেকে বের হয়ে জাপা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, জাপার পক্ষ থেকে ৫০ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চলমান। সবশেষ বৈঠকে আসন সমঝোতা হয়নি। শনিবার (আজ) আবারও উভয়পক্ষ বসবে। তখন এ বিষয়ে সুরাহা হতে পারে। আওয়ামী লীগ কত আসনে ছাড় দিতে চায়—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি বলার পর্যায়ে আসেনি। সমাধান হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
জাপার বর্তমান এমপিদের মধ্যে সমঝোতার তালিকায় আছেন যারা— ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী-৩-এ রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪-এ আহসান আদেলুর রহমান,
কুড়িগ্রাম-২-এ পনিরউদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১-এ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২-এ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩-এ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, পটুয়াখালী-১ সদর আসনে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩-এ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬-এ নাসরিন জাহান রত্না, ময়মনসিংহ-৮-এ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩-এ মো. মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪-এ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬-এ কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩-এ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫-এ কে এম সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪-এ পীর ফজলুর রহমান, ফেনী-৩-এ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৫-এ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বর্তমানে লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হলেও এবার তিনি রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করছেন। এই আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া গত নির্বাচনে ভোট করে পরাজিত হয়েছেন—এমন কয়েকটি আসনে ছাড় পাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
জাপার একাংশ রওশনপন্থিরা এবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই অংশে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, রুস্তম আলী ফরাজীসহ চারজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। রওশনের পক্ষ থেকে জি এম কাদেরের কাছে দাবি ছিল তার অনুসারী অন্তত ৬০ জনের মনোনয়ন নিশ্চিত করা। অন্য দাবি হলো, বহিষ্কৃতদের ফের দলে ফিরিয়ে নেওয়া। কিন্তু জি এম কাদেরপন্থিরা রওশন-সাদ ও রাঙ্গা ছাড়া আর কাউকে মনোনয়ন দিতে সম্মত না হওয়ায় কাদেরপন্থিদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন রওশন। এখানেই শেষ নয়। সর্বশেষ তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে নালিশ করে তার সঙ্গে কোনো জোট না করারও আবদার জানিয়ে আসছেন।