দেশে সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন নারী-পুরুষ কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে নারী ৪ লাখ ৯১ হাজার ১৩৯ জন, যা মোট সরকারি চাকরির ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে সরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। এমনকি প্রশাসনের শীর্ষ পদেও দিন দিন নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে। এটিকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে
মোট জনশক্তির ১৮ শতাংশ নারী। বাকি ৮২ শতাংশ পুরুষ। অবশ্য বিভিন্ন অধিদপ্তরের চাকরিতে নারীর সংখ্যা মন্ত্রণালয়-বিভাগের চেয়ে বেশি। অধিদপ্তরের চাকরিতে নারীদের উপস্থিতি ৩৩ শতাংশ। বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরতদের মধ্যে ১৪ শতাংশ নারী কাজ করছেন। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে নারীদের উপস্থিতি ১৬ শতাংশের মতো। সার্বিক বিবেচনায় শতাংশের এ হিসাবকে বেশ সন্তোষজনক মনে করছেন নারী নেত্রীরা। তবে চাকরিতে নারীদের হার আরও বাড়ানোর দাবি তাদের।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম কালবেলাকে বলেন, এটি খুবই ইতিবাচক যে, চাকরিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। দিন দিন নারী দক্ষ হয়ে উঠছে। তাই চাকরিতে নারীর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ পদেও নারীদের সংখ্যা বাড়ছেÑ এটিকে কীভাবে দেখেন–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পদে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে মানে তারা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজেদের মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আমি মনে করি, সরকারের পলিসি তৈরির সঙ্গে আরও বেশি নারীদের যুক্ত করা দরকার।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা ছিল ২৭ শতাংশ। পরের বছর আরও এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। ২০২১ সালে অবশ্য চাকরিতে নারীর সংখ্যা কিছুটা কমে ২৬ শতাংশ হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এই হার বেড়ে ২৯ শতাংশের একটু বেশি হয়। এরপর আর নতুন তথ্য জানাতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, গত ৫ বছরে সরকারি চাকরিতে নারীর উপস্থিতি আগের চেয়ে ২ শতাংশ বেড়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন ৪০ হাজার ১৮ জন নারী। ১০ গ্রেড থেকে ১২ তম গ্রেড বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ৬৬ হাজার ৫৮ জন। ১৩ গ্রেড থেকে ১৬ গ্রেড বা তৃতীয় শ্রেণির ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৬২ সরকারি চাকরি করছেন। এ ছাড়া ১৭ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত চতুর্থ শ্রেণিতে নারী কর্মচারী রয়েছেন ৫৫ হাজার ৮৭ জন।
প্রশাসনের শীর্ষ পদে নারী: প্রশাসনে বর্তমানে ৮৬ জন সচিব/সিনিয়র সচিব রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন নারী সচিব বেশ দক্ষতার সঙ্গেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তারা হলেনÑ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. শাহনাজ আরেফিন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। এ ছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও নির্বাচন কমিশনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সংস্থার শীর্ষ পদে নারীরা কর্মরত রয়েছেন। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের সুযোগ পাওয়াকে ক্ষমতায়নের পথে অগ্রগতি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।