শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ এএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উপজেলা ভোট ঘিরে বহিষ্কারের হিড়িক বিএনপিতে

এক দিনেই পদ হারালেন ৭৩ জন
উপজেলা ভোট ঘিরে বহিষ্কারের হিড়িক বিএনপিতে

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বহিষ্কারের হিড়িক পড়েছে বিএনপিতে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল ও অঙ্গসংগঠনের ৭৩ জন নেতাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে গতকাল শুক্রবার বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২১ জন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

গত ৭ জানুয়ারি দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এই মর্মে নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দলের হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তৃণমূলে এমন বার্তাও দেওয়া হয়। তবুও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম ধাপে ৩৮ জন এবং দ্বিতীয় পর্বে ৩৫ জন নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার নেতারা প্রার্থীদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। হাতেগোনা কয়েকজন প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও বেশিরভাগই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রয়ে গেছেন। যে কারণে এসব নেতাকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু চিঠির জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেসব নেতাকর্মী কোনো না কোনোভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরের দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয়ে সারা দেশে নজর রাখছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত। কেন না, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতোই শেখ হাসিনা আরেকটা ডামি প্রার্থী দিয়ে ডামি উপজেলা নির্বাচন করছেন। এর পরও বিএনপির যারা যাচ্ছেন, বুঝতে হবে তারা ক্ষমতাসীনদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। কারণ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাও কেউ সুযোগ পাচ্ছেন না। আসলে আওয়ামী লীগের আমলে কোনো ভোট হয় না।

গতকাল যেসব নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন বান্দরবান জেলা মহিলা দলের শিরীন আক্তার, আলীকদম উপজেলা বিএনপির মো. রিটন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা মহিলা দলের জাহানারা জাহাঙ্গীর ও যুবদলের জাহাদুল হুদা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা কায়সার আহমেদ, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. কামাল উদ্দীন, মহিলা দলের রেশমাতুল আরস রেখা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম ও বাবর আলী বিশ্বাস, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির আতাউর রহমান খসরু, জেলা মহিলা দলের শামীমা আক্তার (বেদেনা), নাটোর সদর উপজেলা বিএনপির ইমতিয়াজ আহমেদ হীরা, নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির আফজাল হোসেন ও মহিলা দলের মহুয়া পারভিন, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির এবিএম কাজল সরকার, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সুমি বেগম, মনোয়ারা বেগম, হালুয়াঘাট উপজেলার অ্যাডভোকেট হাসনাত তারেক, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম খান, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির শামসুর রশিদ মজনু, ফুলপুর পৌর বিএনপির ইমরান হাসান পল্লব, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির নাজমুল আলম ও হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির নাজমুল আলম, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের ফরিদ আল-রাজি, শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা বিএনপির এবিএম সাইফুল মালেক, শ্রীবর্দী পৌর বিএনপির আব্দুর রহিম বাদশা, ছাত্রদলের সাদমান সৌমিক মুন ও জোবায়দুল ইসলাম রাজন, ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মেহেদী হাসান মামুন, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সেবুল মিয়া, গৌউছ খান, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা বিএনপির ছবি চৌধুরী, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির রাহেলা বেগম হাসনা, দিরাই উপজেলা বিএনপির গোলাপ মিয়া, শাল্লা উপজেলা বিএনপির গণেন্দ্র চন্দ্র দাস, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির স্বপ্না শাহীন বেগম, আব্দুল রব সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাউছার খান, পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা বিএনপির ফায়জুল কবির তালুকদার, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা মহিলা দলের আফরোজা রহমান লিপি, হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের জাহিদুর রহমান তুষার, সিংগাইর উপজেলা বিএনপির তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ, হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির মোশারফ হোসেন মুসা, গাজীপুর জেলা বিএনপির ইজাদুর রহমান মিলন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাজ্জাদ মোর্শেদ, উপজেলা বিএনপির ওমরাহ খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জিয় পরিষদের শামীম ইস্কান্দার, সরাইল উপজেলা যুবদলের হানিফ আহমেদ সবুজ, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির মাজহারুল ইসলাম, মেঘনা উপজেলা মহিলা দলের হালিমা আক্তার শিমু, দিলারা শিরীন, মেঘনা উপজেলা বিএনপির রমিজ উদ্দীন লন্ডনী, মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির রোমানা আহমেদ, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ইশরাত জাহান পুনম, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা বিএনপির মেহেদী হাসান মিন্টু, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সরোয়ার হোসেন, যুবদলের মো. সেলিম, হাকিমপুর উপজেলা বিএনপির পারুল নাহার, বিরামপুর পৌর বিএনপির আব্দুল হাই, উপজেলা মহিলা দলের উম্মে কুলসুম বানু, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা মহিলা দলের লতিফা আক্তার, হাতীবান্ধা উপজেলা মহিলা দলের মাকতুফা ওয়াসিম বেলী, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা বিএনপির ইমান আলী ও সেকেন্দার আলী চাঙ্গা, মহিলা দলের তাজমিন নাহার (শাপলা), রংপুরের পীরগাছা উপজেলা বিএনপির শাহ মো. ফরহাদ হোসেন অনু, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষক দলের জানে আলম, উপজেলা বিএনপির ফারুক মৃধা, ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষক দলের শাহিদ আল-ফারুক, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একেএম নাজমুল হাসান, সদর উপজেলা বিএনপির রউফ উন-নবী এবং রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের শারমিন আক্তার টুকটুকি।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সময়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। ওই সময় বহিষ্কার করা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জামান, তাঁতীবিষয়ক সহ-সম্পাদক রাবেয়া ভূঁইয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শাহ শহীদ সারোয়ার, মতিউর রহমান মন্টু এবং খন্দকার আহসান হাবিব ও একেএম ফখরুল ইসলাম। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীকে শোকজ এবং বহিষ্কার করা হয়েছে। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা নাটোর, নীলফামারী, সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বরগুনা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, পঞ্চগড়, জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের নেতা।

বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন আমরা তাদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ ও বৈঠক করে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম। তারা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। ফলে দল এখন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিবেশ দূষণ / টায়ার গলিয়ে তেল উৎপাদন

ছাত্রের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা

ছায়ানট মিলনায়তনে রবীন্দ্রসন্ধ্যা

‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যবসায় মানোন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার’

নানা আয়োজনে ‘বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড সেন্ট দিবস’ পালিত

ফের বন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন ছালিমা হোসেন

ভাত রান্না করতে গিয়ে প্রাণ গেল গৃহবধূর

বিয়ের দাবিতে জুয়েলের বাড়িতে ২ সন্তানের জননীর অনশন

অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ

এইডস ছড়িয়ে দিতে বহুজনের সঙ্গে যৌনকর্ম, অতঃপর...

১০

২ হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

১১

সিএনজিতে ধর্ষণের অভিযোগ, অতঃপর...

১২

৩৪০ টাকার জন্য লাথি মেরে গর্ভের সন্তান হত্যা

১৩

রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব এবং অধ্যাপক লাইসা

১৪

ইউরোপীয় স্টাইলে ভিসা আনছে আরব দেশগুলো

১৫

অর্থনীতি উত্তরণে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান

১৬

চুরির অপবাদে তিন শিশুকে ট্রাক্টরচাপা দিয়ে মারার চেষ্টা

১৭

ধর্ষণ ও ভ্রূণ হত্যা মামলায় সেই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

১৮

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হলেন ৭ কর্মকর্তা

১৯

দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল 

২০
X