‘Research on Aviation Safety: Safety is a Mindset’ (বর্তমান সময়, ২০২৪) বইয়ের পর্যালোচনা। বইটির লেখক এয়ার কমোডর মুনিম খান মজলিশ, বিপিপি, পিএসসি। Research on Aviation Safety: Safety is a Mindset বইটিতে এয়ার কমোডর মুনিম খান মজলিশ উড়োজাহাজ নিরাপত্তার প্রচলিত ধারণাগুলোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এবং নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপত্তার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করেছেন। বইটির ভূমিকায় লেখক দেখিয়েছেন, বিদ্যমান নিরাপত্তা নীতিমালা ও প্রক্রিয়াগুলো উড়োজাহাজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট। তবে বাস্তবে এগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ ও চর্চা করা হয় না।
মজলিশের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বইটির মূল ধারণাগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে। বইয়ের শুরুতে নিরাপত্তা তত্ত্বের ভিত্তি উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ মডেল ও কাঠামোর আলোচনা রয়েছে; যা ফ্লাইট নিরাপত্তার জন্য প্রযোজ্য। এ তাত্ত্বিক ভিত্তির সঙ্গে পুরোনো ও নতুন গবেষণার সংযোগ ঘটানো হয়েছে।
বইটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এতে বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া ঘটনা ও মানুষের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। মজলিশ প্রকৃত বিমান দুর্ঘটনার উদাহরণ ব্যবহার করে দেখিয়েছেন নিরাপদ মনোভাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, তিনি এমন পরিস্থিতির কথা বলেছেন যেখানে ভালো যোগাযোগ ও ইতিবাচক মনোভাব বিপর্যয় এড়াতে সহায়তা করেছে। এ ঘটনাগুলো শুধু তত্ত্বকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয় বার্তা দিয়েছে যে, সঠিক সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শিতা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ বা কমানোর ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী।
মজলিশ তার বইয়ে উড়োজাহাজ নিরাপত্তার সংস্কৃতি গঠনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, নিরাপত্তা শুধু এককালীন শিক্ষা নয়, বরং এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া, যা নতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তিনি এভিয়েশন কর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আহ্বান জানান, যা তাদের দক্ষতা পুনরুজ্জীবিত করতে এবং নিরাপত্তার প্রতি দায়িত্ববোধ তৈরি করতে সহায়তা করবে। মজলিশ পরামর্শ দিয়েছেন যে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মানুষের বিভিন্ন আচরণগত বিষয়, যেমন ক্লান্তি ব্যবস্থাপনা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মনোবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তার মতে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং মানবিক বিষয়গুলোর প্রতিও মনোযোগী হওয়া উচিত।
তিনি প্রতিক্রিয়াশীল (reactive) সংস্কৃতি থেকে সক্রিয় (proactive) সংস্কৃতিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি সমালোচনা করেছেন সেই প্রবণতার, যেখানে দুর্ঘটনার পরই কেবল নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মজলিশের অন্যতম প্রধান সুপারিশ হলো সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (SMS) কার্যকর করা, যা সংস্থাগুলোকে নিয়মিতভাবে ঝুঁকি নথিভুক্ত, পর্যবেক্ষণ এবং মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এসব ব্যবস্থা দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা তৈরি করতে পারে এবং নিরাপত্তার প্রচেষ্টাগুলো প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর গভীরে প্রোথিত করতে সহায়তা করে।
লেখক বইটির উপসংহারে উড়োজাহাজ নিরাপত্তা সংস্কৃতি পুনর্গঠনের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তিনি নিরাপত্তার প্রতি নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি, নিয়মিত নিরাপত্তা নিরীক্ষা এবং সব স্তরের কর্মীদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, শীর্ষ পর্যায় থেকে নিরাপত্তার প্রতি উৎসাহ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক মানসিকতা ধারণকারী কর্মীদের স্বীকৃতি দিতে ‘নিরাপত্তা পুরস্কার কর্মসূচি’ চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তুষার তালুকদার, শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ
ঢাকা সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
মন্তব্য করুন