স্বাস্থ্য খাত একটি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তির মূল উপাদান। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নানা সাফল্যের পাশাপাশি নানা সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত। এ প্রেক্ষাপটে সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা একটি সময়োপযোগী, সর্ববিস্তৃত ও বৈপ্লবিক উদ্যোগ। এ কমিশনের সুপারিশগুলো শুধু সেবা বৃদ্ধি বা অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। এ পরিবর্তনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জনমুখী, সর্বজনীন, সহজলভ্য ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি। কিন্তু শুধু সুপারিশে থেমে থাকলে এ প্রচেষ্টা অর্থহীন হবে। এখন জরুরি হলো বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন।
কী আছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে?
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও নাগরিক অধিকার: কমিশনের কেন্দ্রীয় প্রস্তাবগুলোর একটি হলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এতে করে দেশের প্রতিটি নাগরিক বিনামূল্যে ও ন্যায্যভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে। ইউনিয়ন সাব-সেন্টার, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক—এ তিন ধরনের বিদ্যমান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে একীভূত করে একটি সমন্বিত সেবা কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এতে জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি কাটিয়ে কার্যকর সেবা নিশ্চিত হবে এবং সেবাগ্রহীতারা বিভ্রান্তির শিকার হবে না। শহুরে জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সৃজনশীলভাবে হেলথ এডুকেশন চালুর মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসচেতনভাবে গড়ে তোলার সুপারিশ রয়েছে। জনস্বাস্থ্যসেবার ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রশাসন এবং ক্লিনিক্যাল স্বাস্থ্য প্রশাসনকে পৃথক কাঠামোতে রূপান্তর করার সুপারিশও সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সেবার বিস্তৃতি: জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নত টারশিয়ারি সেবা চালুর মাধ্যমে রোগীদের ঢাকাকেন্দ্রিক যাতায়াত কমিয়ে আনার সুপারিশ রয়েছে। এতে সময়, অর্থ ও ভোগান্তি—সবই কমবে। জনস্বাস্থ্য প্রশাসন ও ক্লিনিক্যাল প্রশাসন পৃথক করে দুটিকে নিজস্ব দক্ষ কাঠামোতে রূপান্তর করার মাধ্যমে উভয় শাখায় জবাবদিহি ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
একীকৃত জরুরি ও সহায়ক সেবা নেটওয়ার্ক: কমিশন জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরি সেবা নেটওয়ার্ক গঠনের সুপারিশ করেছে। একইভাবে ফার্মেসি, রক্তসঞ্চালন, ডায়াগনস্টিক ও রোগী পরিবহন—এ চারটি ক্ষেত্রে জাতীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তুললে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও গুণগত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
ওষুধ, প্রযুক্তি ও সরবরাহ ব্যবস্থা: সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ ঘাটতি দূর করতে ২৪ ঘণ্টা খোলা ফার্মেসি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। স্বচ্ছ কেন্দ্রীয় ক্রয়ব্যবস্থা, জেনেরিক ওষুধ ব্যবহারে উৎসাহ, এপিআই উৎপাদনে প্রণোদনা, ওষুধের মূল্যনিয়ন্ত্রণ ও গুণমান নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নাম ব্যবহারের অভ্যাস চালু এবং চিকিৎসকদের প্রমাণভিত্তিক প্রেসক্রিপশন নিশ্চিতে প্রশিক্ষণ ও অডিট চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য: নারী, মাতৃত্ব ও প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি জাতীয় নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে নারীরা এককেন্দ্রিক মানসম্মত ও বিশেষায়িত সেবা পাবেন।
সেবা মান ও মানবিকীকরণ: কমিশন প্রস্তাব করেছে, প্রতিটি রোগী যেন অন্তত ১০ মিনিট সময় পান, এ বিষয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে একটি নীতিগত মানদণ্ড গড়ে তুলতে হবে। সেবার মান পরিমাপ, ডিজিটাল অভিযোগ প্রক্রিয়া, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা—এসব বিষয়ের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শাসন কাঠামোর সংস্কার: দেশব্যাপী স্বাস্থ্য প্রশাসনে নেতৃত্ব সংকট কাটাতে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা হবে নীতিনির্ধারণ, মাননির্ধারণ ও তদারকির সর্বোচ্চ সংস্থা। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ নামে একক প্রশাসনিক কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরকে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনটি বিভাগ (জনস্বাস্থ্য, ক্লিনিক্যাল সেবা ও শিক্ষা) এবং ১১টি স্বায়ত্তশাসিত আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ গঠনসহ জেলা-উপজেলায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ রয়েছে।
জনবল নিয়োগ ও স্বাস্থ্যকর্মী ব্যবস্থাপনা: স্বতন্ত্র ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য)’ গঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ও নীতিমালা আরও পেশাদার ও স্বচ্ছ হবে। একটি বেতন বোর্ড গঠন করে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ন্যায্য ও প্রণোদনামূলক বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। ওষুধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতে দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফুড, ড্রাগ ও আইভিডি মেডিকেল ডিভাইস প্রশাসন গঠনের সুপারিশ রয়েছে।
চিকিৎসা শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন: কমিশন সুপারিশ করেছে, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব মেডিকেল এডুকেশনের মান অনুসারে পাঠ্যক্রম ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ, শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হ্রাস, কমিউনিটি ও স্কিলভিত্তিক শিক্ষা চালু, ফ্যামিলি মেডিসিন কোর্স ও কন্টিনিউড মেডিকেল এডুকেশন চালুর প্রস্তাব এসেছে।
ডিজিটাল রূপান্তর ও তথ্য ব্যবস্থাপনা: সার্বিক স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করে ইউনিক হেলথ আইডি ও ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড চালুর সুপারিশ রয়েছে। ডিজিটাল লজিস্টিক ও প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা: চিকিৎসকদের ওষুধ কোম্পানির উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ, মেডিকেল কনফারেন্স আয়-ব্যয়ের হিসাব বাধ্যতামূলক এবং চিকিৎসকদের চেম্বারে পণ্য প্রচার নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর নীতিমালা সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থায়ন: স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ১৫ শতাংশে উন্নীত করা ও একটি জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন: প্রাথমিকভাবে পুরোনো আটটি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে ধাপে ধাপে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের কথা বলা হয়েছে। নিপসম, আইইডিসিআর, আইপিএইচ, আইপিএইচএনের মতো পাবলিক হেলথ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নীতিগত স্বায়ত্তশাসনের আওতায় আনতে চায় কমিশন।
সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় ও সেবার গুণগত মান: ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস’, মাননির্ভর গ্রেডিং ব্যবস্থা, সিনিয়র চিকিৎসক নেতৃত্বে ব্যবস্থাপনা বোর্ড এবং বিদেশমুখিতা কমাতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে উন্নত সেবা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে।
এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা ভাঙার সাহস, এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। যদি আমরা এ সময়টি কার্যকর রূপান্তরের মুহূর্ত হিসেবে না গ্রহণ করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই এখনই সময়—সুপারিশ থেকে বাস্তবায়নের দিকে যাত্রা শুরুর।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে পারে?
সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ যে কোনো সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ চ্যালেঞ্জ আরও জটিল, কারণ কাঠামোগত বা নীতিগত সংস্কার শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; এটি একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ফসল, যার বীজ বপন সাধারণত নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহারে করা হয়। স্বভাবতই অন্তর্বর্তী সরকারের সেই রাজনৈতিক প্রস্তুতির সুযোগ ছিল না।
এ ছাড়া, পূর্ণ মেয়াদে নির্বাচিত কোনো সরকারও যদি তাদের প্রথম বছরেই সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তাহলে পরবর্তী বছরগুলোতে তা বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, সরকার গঠন-পরবর্তী সময় থেকেই জনপ্রিয়তার ক্রমাবনতি শুরু হয়, যা পরবর্তী বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। তখন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনসমর্থন অনেকাংশে ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এ বাস্তবতা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের হাতে এখনো যে প্রায় সাত মাস সময় রয়েছে, তা কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। তবে বাস্তব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিছু নীতিগত সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। যেমন—দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন এবং ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলো এখনই শুরু করা যেতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ অন্তর্বর্তী সরকারের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং পরবর্তী সরকারগুলোর জন্যও একটি ভিত্তি তৈরি করবে।
কীভাবে শুরু হবে?
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগের জন্য শুধু সরকারি আদেশ (জিও) জারিই যথেষ্ট। যেমন—গ্রামীণ এলাকায় একীভূত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা এবং কার্যকর রেফারাল ব্যবস্থা গড়ে তোলা; একইভাবে, শহরাঞ্চলেও রেফারাল ব্যবস্থাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা সম্ভব প্রশাসনিক নির্দেশনার মাধ্যমে।
তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন বা অর্ডিন্যান্স জারির প্রয়োজন হবে। যেমন—একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন এবং একটি পেশাদার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা। এসব প্রস্তাব শুধু নীতিগত সিদ্ধান্তে নয়, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়েই বাস্তবায়িত হওয়া দরকার।
এ ছাড়া কিছু সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নের আগে রূপরেখা চূড়ান্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন—স্বাস্থ্য কমিশন ও ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’-এর কাঠামো ও কর্মপদ্ধতির খসড়া রূপরেখা চূড়ান্তকরণ। এজন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা জরুরি, যার দায়িত্ব হবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করা এবং প্রয়োজনীয় অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন ও তা চূড়ান্ত আকার দেওয়া।
পাশাপাশি, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের প্রয়োজন রয়েছে, যা সংস্কার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।
তবে এ দুটি কমিটি—টেকনিক্যাল ও স্টিয়ারিং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, বরং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত হওয়া জরুরি। অন্যথায়, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক জটিলতা ও স্বার্থসংঘাত সংস্কার প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দিতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের বিনীত আহ্বান—জুলাই ২০২৫ থেকেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথাযথ টেকনিক্যাল এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করুন। এ সূচনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার প্রতি উৎসর্গ করা সম্ভব হবে, তেমনি ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশ ও অর্ডিন্যান্স জারি করার বাস্তব সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
ফলে ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতের কাঠামোগত সংস্কারের প্রথম ধাপ দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করবে, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নও ত্বরান্বিত করবে।
আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে সাহস ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেবে এবং বাংলাদেশে একটি কার্যকর ও জনগণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আর দেরি করবে না।
লেখক: অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আহ্বায়ক, অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি); আহ্বয়ক, নেটওয়ার্ক ফর হেলথ কেয়ার এক্সিলেন্স (এনএইচই)
মন্তব্য করুন