প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আজ বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের ধরন আমূল বদলে দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) এখন আর শুধু গবেষণাগারের পরীক্ষামূলক প্রকল্প নয়; এটি শিল্প, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব খাতেই কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশও এ পরিবর্তনের প্রভাবের বাইরে নয়। যদিও এআই অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রচলিত চাকরির সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে, যা শ্রমবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।এআইর কারণে কোন সেক্টরে ঝুঁকি বেশিবাংলাদেশে এখনো অনেক কাজ পুনরাবৃত্তিমূলক ও নিয়মভিত্তিক। যেমন—ডেটা এন্ট্রি, সাধারণ হিসাবরক্ষণ, বেসিক কাস্টমার সার্ভিস এবং ফ্যাক্টরির ম্যানুয়াল কাজ। এআই-চালিত সফটওয়্যার ও অটোমেশন সিস্টেম এসব কাজ দ্রুত, নির্ভুল ও কম খরচে সম্পন্ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আগে যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর লাগত, সেখানে এখন একটি এআই টুল ও দুই-তিনজন সুপারভাইজারই যথেষ্ট। এ ছাড়া গার্মেন্টস ও ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে স্মার্ট মেশিন, রোবোটিক আর্ম ও অটোমেটেড কাটিং-সেলাই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে। এতে দক্ষতাহীন বা কমদক্ষ শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে।শুধু সংকোচন নয়, নতুন সুযোগও তৈরি হবেযদিও কিছু চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে এআই নতুন ধরনের পেশার দরজা খুলে দিচ্ছে। যেমন—এআই সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ও মেইনটেন্যান্স, ডেটা অ্যানালাইসিস ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন, সাইবার সিকিউরিটি, মেশিন লার্নিং মডেল ট্রেনিং ও অপটিমাইজেশন, এআই-ভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন।বিশ্বব্যাপী ‘হিউম্যান-এআই কলাবোরেশন’ বা মানব ও এআই একসঙ্গে কাজ করার ধারা জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে মানুষ সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ করে আর এআই ডেটা প্রসেসিং, পুনরাবৃত্তিমূলক হিসাব ও টেকনিক্যাল কাজ সামলায়। ফলে এআই শত্রু নয়, বরং দক্ষ সহকারী হয়ে উঠছে।শিক্ষার্থীদের বর্তমান করণীয় কীপ্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা। শিক্ষার্থীদের এখনই এআই-সম্পর্কিত টুলস, প্রোগ্রামিং ভাষা (যেমন Python, R), ডেটা অ্যানালাইসিস এবং মেশিন লার্নিংয়ের মৌলিক ধারণা শেখা প্রয়োজন। এর জন্য Coursera, Udemy, Kaggle-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোটখাটো প্রজেক্টে হাত দেওয়াও উপকারী হবে। সফট স্কিল উন্নয়ন। এআই টেকনিক্যাল কাজ করলেও মানুষের সৃজনশীলতা, যোগাযোগ ক্ষমতা, সমস্যা সমাধান দক্ষতা এবং দলগত কাজের অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। যেমন, একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার এআই টুল ব্যবহার করে রিপোর্ট তৈরি করলেও, ক্লায়েন্টের সঙ্গে দরকষাকষি বা কৌশল নির্ধারণে মানুষের বুদ্ধিমত্তাই মুখ্য।বহুমুখী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং সৃজনশীলতার সমন্বয় জানা ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। উদাহরণস্বরূপ, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার যদি এআই-ভিত্তিক ডিজাইন টুল ব্যবহার শিখে নেয়, তবে তার কাজের গতি ও মান দুটোই বেড়ে যাবে।বিশ্ব অর্থনীতি ও প্রযুক্তি দ্রুত বদলাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উচিত আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড, নতুন প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের চাকরির চাহিদা সম্পর্কে আপডেট থাকা। পেশাগত নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম LinkedIn, বিভিন্ন ওয়েবিনার ও সেমিনারে অংশগ্রহণ এর ভালো উপায়।বাংলাদেশে এআই প্রযুক্তি যেমন কিছু প্রচলিত চাকরি সংকুচিত করতে পারে, তেমনি নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি করবে। মূল বিষয় হলো, সময়মতো নতুন দক্ষতা অর্জন এবং প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া। যারা এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, তারা ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। এআইকে ভয় পাওয়ার বদলে এটিকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সাকিবুল হাছান, সংগঠক
মন্তব্য করুন