ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখায় আমদানিকারক থেকে শুরু করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সবাই ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রতিদিনের মতো শনিবারও সরগরম ছিল দেশের প্রধান বিমানবন্দরটির আমদানি-রপ্তানির কার্গো ভিলেজ এলাকা। দুপুর তখন আনুমানিক সোয়া ২টা। ওই সময়ে কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স থেকে হঠাৎ ধোঁয়া বের হয়। চোখের পলকেই তা দাউদাউ আগুনে রূপ নেয়। পুড়তে থাকে মূল্যবান আমদানি পণ্য। টানা পৌনে সাত ঘণ্টা ধরে জ্বলার পর রাত ৯টার কিছু পর আগুন নিয়ন্ত্রণ আনার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি। তখনো পোড়া অংশ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের ফ্লাইট। পরে ফ্লাইট চালু করা গেলেও এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত গতকালও তা ছিল সীমিত। স্বাভাবিক হয়নি সব কার্যক্রম। এমনকি রোববার সকাল পর্যন্তও পুরোপুরি নেভানো যায়নি আগুন। এর আগে শনিবার ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘন কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা বিমানবন্দর এলাকা। দিনের আলোতেও আগুনের শিখা দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়লে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। নির্ধারিত উড্ডয়ন ফ্লাইট স্থগিত রেখে অবতরণ ফ্লাইটগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। জানা যায়, ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কুরিয়ার সার্ভিসের গুদাম এলাকায় প্রথম ধোঁয়া দেখা যায়। ওই গুদামটি ‘ডেঞ্জারাস গুডস গুদাম’ নামে পরিচিত, যেখানে আমদানি করা বিস্ফোরক বা দাহ্য পদার্থ রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপক ইউনিট এবং বেবিচকের নিজস্ব কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী অগ্নিনির্বাপক দলকে সহায়তা করার পাশাপাশি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস, আনসার এবং বেবিচকের অন্তত ৩০ জন সদস্য আহত হন।
রোববার কালবেলায় প্রকাশিত খবর বলছে, পাঁচ দিন আগেই যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট পরিচালিত মূল্যায়নে কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শতভাগ সাফল্য অর্জন করে এ কার্গো কমপ্লেক্স। এমন সাফল্যের পরপরই স্পর্শকাতর এই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের উৎস কোথায় এবং কীভাবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করল, গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনার সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক পরিমাণ জানা যায়নি। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা—আগুনে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। ছাই হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সব নথি, ওষুধের কাঁচামাল, বন্ডেড কাঁচামাল, কেমিক্যাল পণ্য।
আমরা মনে করি, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষতিসাধিত হয়েছে, তা বহুমাত্রিক। এ ক্ষতি শুধু দৃশ্যমান অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয় কিংবা শুধু আমদানি-রপ্তানিকারকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; ক্ষতি হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ও সুনামের সঙ্গে ব্যবহৃত বন্দরটির নিরাপত্তার বিষয়টিও। আমাদের প্রত্যাশা, এ ঘটনায় যে হাজার হাজার ব্যবসায়ী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়েছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা তাদের পাশে দাঁড়াবেন। পাশাপাশি ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি বন্দরের সক্ষমতায় কোনো ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকে, তার উন্নতিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত বন্দরটির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হবেন।
মন্তব্য করুন