সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। রোববার কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় ভারত। এরপর গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। পিছিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও ম্যাচের ৭০ মিনিটে মৌমিতার গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো গোল না হলে টাইব্রেকারে গড়ায় ফাইনালের ভাগ্য। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপার স্বাদ নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এ বিজয়ে সারা দেশের মানুষের মতো আমরাও আনন্দিত। কালবেলা পরিবারের পক্ষ থেকে দলের সব খেলোয়াড় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
সাফজয়ী মেয়েদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ১৬ বছরের নিচের মেয়েরা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের আমি ডাকব এবং প্রাইজমানি দিয়ে উৎসাহিত করব। অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা কোটি বাঙালির স্বপ্ন ছুঁয়েছে। এ বিজয় মেয়েদের স্বপ্নটা আরও বড় করে দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রফি জয় আরও ভালো করার অঙ্গীকারই যেন তুলে ধরল। আন্তর্জাতিক খেলায় এমন একটি জয়ের জন্য দেশের ফুটবল ভক্ত ও অনুরাগীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন। রোববার আমরা মাঠে দেখেছি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও জয়ের ক্ষুধা। গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠে সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে বলেই বিজয়ীর হাসি হেসে মাঠ থেকে ফিরেছে। এ জয় দেশের ফুটবলের জয়। ফুটবল মানবিকতার জয়। আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌরভ ছড়িয়ে জয়ের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় ফাইনালের আগপর্যন্ত সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছিল সুরভী আকন্দ প্রীতি। পাঁচ গোল করা এ ফরোয়ার্ড প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। ফাইনালে আলোক রশ্মি নিজের ওপর টেনে নিয়েছিল গোলকিপার ইয়ারজান বেগম। টাইব্রেকারে তিনটি স্পট-কিক রুখে দেওয়ার আগেও দারুণ উজ্জ্বল ছিল এ গোলকিপার। ম্যাচের পর বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেছেন, ‘এটার আনন্দ অন্যরকম, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে। এই দলটা গড়তে সময় ছিল খুব কম। সে হিসেবে মেয়েরা যা করেছে, সেটা অসাধারণ।’ সেরা গোলকিপার ইয়ারজান বলল, ‘অনেক ভালো লাগছে। সেরা গোলকিপার হওয়ার অনুভূতিটা দারুণ। এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে সেরা গোলকিপার হয়েছি। এ কৃতিত্বটা আমি আমার বাবা আর কোচকে দিতে চাই।’ অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস বলেছে, ‘আমি খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম, যখন ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলা (অফিসিয়াল ফটোসেশন করা) হয়, তখন থেকেই একটা ইচ্ছা কাজ করছিল—এই ট্রফি আমিই নেব। আমি এটা খেলোয়াড়দেরও বলেছি। আমি এখন সার্থক যে, ট্রফি আমাদের কাছে ধরে রাখতে পেরেছি।’ ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা শুধু যে অনেক পুরোনো, তা-ই নয়। এ সম্পর্ক আবেগেরও। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি খেলার মাঠে আরেক ফ্রন্ট খুলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বে আর কোনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেই দেশের ফুটবলারদের এমন উদ্যোগের কোনো নজির নেই।
বাঙালি ফুটবলকে কখনো বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। দেখে আবেগ দিয়ে। এ জয় অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ফুটবলের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে যে সামাজিক বাধা ছিল, সেটাও অনেকাংশে দূর হবে।