ঢাকায় ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে। শত শত রোগীর রক্ত এবং প্লাটিলেট জোগাড়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল মানুষ। সেই সময় চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও ছিল সীমিত। বর্তমানে মানুষের ওই ভীতি ও আতঙ্ক নেই। চিকিৎসকরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ। সাধারণত এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে এ ভাইরাসে মানুষ সংক্রমিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার কামড়েও রোগ ছড়াতে পারে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন।
ভাইরাসের ধরন: ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ ধরনের, ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। যারা একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, তারা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
জ্বরের ধরন: ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর—সাধারণত তীব্র জ্বর ও সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি, মাংসপেশি, মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা হয়। এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতায় স্পর্শ করলেই কেঁদে ওঠে, খিটখিটে মেজাজের হয়। জ্বরের চার বা পাঁচ দিনের সময় শরীরজুড়ে লালচে দানা বা স্কিন র্যাশ হয়, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এ ছাড়া বমিভাব বা বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে, রুচি কমে যায়। সাধারণত চার বা পাঁচ দিন জ্বরের পর এমনিতেই চলে যায়। তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসে। একে ‘বাইফেজিক ফিভার’ বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর—ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা যেমন, শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপাত, চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, মেয়েদের সময়ের আগেই মাসিক হওয়া, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। মস্তিষ্ক বা হার্টেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে হাইপো ভলিউমিক শকে গিয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ হলো শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত, হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মন্তব্য করুন