দৈনন্দিন জীবনে ঘাড়ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এই যান্ত্রিক জীবনে অনেককেই দেখা যায় মোবাইল ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে থাকেন একই ভঙ্গিতে। শরীরের সঠিক পজিশন মেইনটেইন না হলে বা একই পজিশনে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে পেশিতে টান বা ব্যথার সৃষ্টি হয়। একটানা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করলে বা সঠিক ভঙ্গিতে না ঘুমানোর কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। কিছু আঘাত বা দুর্ঘটনা, হাড়ের ক্ষয় এবং নার্ভের চাপের কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। তবে সামনে ঝুঁকে যারা কাজ করেন, তাদের মধ্যে সাধারণত এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। যেমন ব্যাংকার, বাইকচালক, কম্পিউটার
অপারেটর, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে—এমন পেশা ইত্যাদি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয়; কিন্তু বর্তমানে এর আগেও হাড়ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। তবে আপনি যদি এক সপ্তাহের বেশি ঘাড়ে তীব্র ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘাড়ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।
ঘাড়ে ব্যথার ফিজিওথেরাপি
ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হট প্যাক বা কোল্ড কম্প্রেস প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। ট্রাকশন থেরাপি দেওয়া হয়, যা স্নায়ুর ওপর চাপ কমাতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ম্যানুয়াল থেরাপি যেমন জয়েন্ট মবিলাইজেশন বা ম্যানুপুলেশন কৌশল ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রোথেরাপি
যেমন TENS বা আলট্রাসাউন্ড ব্যথা কমাতে দারুণ কাজ করে। প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রাই নিডলিং ও লেজার থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন ব্যায়াম স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্দেনিং এক্সসারসাইজ করানো হয়। ফলে টাইট মাসল রিলিজ বা
জয়েন্টের রেঞ্জ বাড়ানো হয় এবং দুর্বল পেশিগুলোকে শক্তিশালী করা হয়। ব্যথার তীব্রতা কমে গেলে চেয়ারে বসে ‘চিন টাক’ এক্সারসাইজ করা যাবে। অনেক ক্ষেত্রে মায়োফেসিয়াল রিলিজ এবং মাসল এনার্জি টেকনিক ব্যবহার করা হয়, যা ঘাড়ের ব্যথার জন্য খুব কার্যকর ও আধুনিক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। সঠিক অঙ্গবিন্যাস ঘাড়ের পেশি এবং জয়েন্টগুলোর চাপ কমাতে সাহায্য করে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট সঠিক অঙ্গবিন্যাসের জন্য প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা অনুযায়ী নির্দেশিকা দিয়ে থাকেন।
শারমিন হোসেন
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট
চেম্বার: আলোক মাদার অ্যান্ড
চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬
মন্তব্য করুন