মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সার্বিক সুস্থতার এক অপরিহার্য অংশ। আমরা সাধারণত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশা দূর করতে নানা উপায়ে চেষ্টা করি, কিন্তু খাবারের প্রভাবকে প্রায়ই উপেক্ষা করি। অথচ পুষ্টিবিদরা বলছেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে মেজাজ, চিন্তাশক্তি এবং শক্তির মাত্রার ওপর। তাদের দাবি, পুষ্টিকর খাবার শরীরের পাশাপাশি মনকেও চাঙা রাখে, স্ট্রেস সামলাতে সাহায্য করে এবং সার্বিকভাবে জীবনকে করে আরও ভারসাম্যপূর্ণ।
সম্প্রতি ভারতীয় পুষ্টিবিদ লবলিন কৌর জানিয়েছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও খাদ্যাভ্যাস যুক্ত করা জরুরি। নিচে রইল এমন ১০টি খাবার ও অভ্যাস, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন—
১. ঘরে তৈরি দই
দই শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা পরোক্ষভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। প্রতিদিন আধা থেকে এক কাপ ঘরে তৈরি দই খেলে উপকার মেলে। এর সঙ্গে ভাজা জিরা ও গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে স্বাদও বাড়ে, হজমও সহজ হয়।
২. ওটস ও অন্যান্য হোলগ্রেইন
ওটসে থাকা বিটা-গ্লুকান রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ফলে শক্তি ও মেজাজ দুটোই ভালো থাকে। সকালের নাস্তায় ওটস উপমা, ওভারনাইট ওটস বা ওটমিল খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ব্রাউন রাইস ও কুইনোয়া রাখলে পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে।
৩. কলা
সহজলভ্য এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬, যা সেরোটোনিন তৈরি করে—এই হরমোনই আমাদের ভালো মুডে রাখে। প্রতিদিন একটুখানি কলা ও এক মুঠো বাদাম খেলে শরীর ও মন দুটোই থাকে প্রফুল্ল।
৪. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিটি মিলেই প্রোটিন থাকা উচিত।নিরামিষভোজীরা ডাল, ছোলা ও স্প্রাউটস রাখতে পারেন; অন্যরা ডিম বা মাছ বেছে নিতে পারেন।
৫. আখরোট ও বাদাম
ছোট হলেও বাদামের উপকারিতা বিশাল। আখরোটে আছে উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রদাহ কমায় ও মেজাজ ভালো রাখে। অন্যদিকে, কাঠবাদামে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম—স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও ঘুম ভালো আনে। প্রতিদিন এক মুঠো খাওয়া যথেষ্ট।
৬. ফ্ল্যাক্সসিড ও কুমড়ার বীজ
প্রতিদিন এক টেবিলচামচ ফ্ল্যাক্সসিড বা কুমড়ার বীজ খেলে শরীর পায় প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম। এগুলো সালাদের ওপরে ছিটিয়ে বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৭. পাতা জাতীয় সবজি
পালং, লাল শাক, সরিষা শাক ইত্যাদিতে থাকে ফলেট ও ম্যাগনেশিয়াম, যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে। এগুলো ডাল বা ওমলেটে মিশিয়ে খেলে পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে।
৮. রঙিন ফল ও সবজি
বেরি, কমলা, আমলা, বিটরুট, টমেটো—এ ধরনের রঙিন ফল ও সবজিতে থাকে পলিফেনল, যা মস্তিষ্কে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং মন ভালো রাখে। প্রতিটি খাবারে অন্তত দুই রঙের সবজি বা ফল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৯. ভিটামিন ডি ও বি-১২
এই দুটি ভিটামিন শক্তি, মেজাজ ও মনোযোগ ধরে রাখতে অপরিহার্য। সকালে অল্প রোদে কিছুক্ষণ থাকা ভিটামিন ডি পাওয়ার প্রাকৃতিক উপায়। তবে ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। নিরামিষভোজীদের জন্য ভিটামিন বি-১২ সাপ্লিমেন্টও প্রয়োজন হতে পারে।
১০. ডার্ক চকলেট
৭০ শতাংশ বা তার বেশি কোকোযুক্ত ডার্ক চকলেট খেলে মেজাজ ভালো হয়, কারণ এতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম ও পলিফেনল। তবে দিনে ১৫-২০ গ্রামই যথেষ্ট, যাতে চিনি অতিরিক্ত না হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, ‘মন ভালো রাখার শুরু হয় প্লেট থেকেই।’ তাই নিয়মিত ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান ও পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে মন থাকবে শান্ত, মেজাজ প্রফুল্ল, আর মানসিক চাপ সামলানোও হবে সহজ।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন