প্রকৃতিতে কনকনে শীত নিয়ে এসেছে পৌষ। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। হিমেল বাতাস শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে আগামী শুক্রবার থেকে। এ বৃষ্টি তিন দিন থাকতে পারে। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনার বিষয়টি আগামীকাল বুধবার আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টির পর বাড়তে পারে শীত। তবে বৃষ্টির আগে কয়েকদিন তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ এখন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আছে। এর একটি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আজ মঙ্গলবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
ভারতের ওড়িশার উপকূলে এই লঘুচাপ সৃষ্টি হলে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে পারে। আর বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশেই প্রতিদিন তাপমাত্রার পারদ নামছে। মাসজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত চলতে পারে। এবার শীত অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হতে পারে। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির কাছাকাছি নামতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, লঘুচাপের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে শনিবার বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আগামী রোববারেও কিছু এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে বা আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। উপকূলের বাইরে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। বৃষ্টির বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করে বলা যাবে।
এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও দেশে রেকর্ড বৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ওপর রেকর্ড ব্রেকিং পরিমাণে শীতকালীন বৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ২০২২ সালের ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি যে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছিল এ পরিমাণে বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। আগামী ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে একই সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে একটি শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপ অতিক্রম করবে।
তিনি বলেন, স্থলভাগের ওপরে পশ্চিমা লঘুচাপ ও সমুদ্রের ওপরে লঘুচাপের মিলিত প্রবাহে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ওপর রেকর্ড পরিমাণে শীতকালীন বৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। সম্ভাব্য এই ভারি বৃষ্টি সম্বন্ধে ৯০ শতাংশের বেশি নিশ্চিত। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা যাচ্ছে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর। অপেক্ষাকৃত হালকা পরিমাণে বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর ওপর।
তিনি আরও বলেন, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর আলুচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে ভারি বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ার কারণে। এসব বিভাগের কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যে, আজ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলুর জমিতে কৃত্রিম সেচ না দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে, জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করে রাখার প্রস্তুতি নিতে।