চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে খেলার মাঠসহ অবকাঠামো তৈরি করছে। এমনকি ৬০ ফুট উচ্চতার পাহাড় কেটে স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বন্দর নগরীর বায়েজিদ লিঙ্ক রোড এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক জলাভূমিও ভরাট করছে। অবকাঠামো নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব কাজে হাত দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুমোদনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠসহ অবকাঠামো তৈরিতে প্রায় ৩ লাখ ঘনফুট পাহাড় কেটেছে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শনে এই অবৈধ পাহাড় কাটা, ভরাট ও মোচনের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর থেকে সদর দপ্তরে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প প্রকৌশলী খালেদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, খেলার মাঠ তৈরির জন্য সমতল জায়গা দরকার। আমরা পাহাড়ের মধ্য এরকম একটি জায়গা খুঁজে বের করে মাঠ তৈরি করেছি। সেখানে আয়তাকার জায়গার জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটতে হয়েছে। তবে কয়েক লাখ ঘনফুট পাহাড় কর্তনের বিষয়ে পরিবেশের অভিযোগের বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই, এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগ।
এশিয়ার পশ্চাৎপদ নারী সমাজের বিশেষত এশীয় অঞ্চলের মেধাবী গ্রামীণ ছাত্রীদের উন্নততর শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব স্তরে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে সরকার ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এজন্য চট্টগ্রামের উত্তর পাহাড়তলী ও জালালাবাদ মৌজায় প্রায় ১৪০ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে ও ২০১০ সালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৩০ বিঘা জমির পাহাড় কর্তনের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১০ সালে সেপ্টেম্বরে ছাড়পত্র প্রদান করে, যা ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সমীক্ষা ও ছাড়পত্রের শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল যে, পূর্বানুমোদনের বাইরে পাহাড় কাটা, মোচন বা ভরাট করা যাবে না। এজন্য ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকে; কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই শর্ত উপেক্ষা করে আবারও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছে।
পাহাড় কাটার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে পাহাড়ে সাইনবোর্ড লাগানো হবে এবং টহল বাড়ানো হবে। পাহাড় মালিকদের চিঠি দিয়ে পাহাড় না কাটতে সতর্ক করা হবে। কেউ আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে, ভরাট করে এবং মোচন করে এলাকার ভূমিরূপ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এলাকার সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পাহাড়ের পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে এনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা কালবেলাকে বলেন, ২০১০ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী একান্ত জাতীয় স্বার্থ ব্যতীত পাহাড় কাটা নিষেধ। যদি কাটতেও হয় তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ব্যক্তিমালিকানায় পাহাড় থাকলেও অনুমতি ছাড়া কেউ কাটতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত অংশের বাইরে গিয়ে পাহাড় কেটেছে। এজন্য তাদের সমস্ত নির্মাণ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।