জহিরুল ইসলাম মিলন, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
টাঙ্গাইল

কড়ি পাথরের নওয়াব শাহি মসজিদ

কড়ি পাথরের নওয়াব শাহি মসজিদ

প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব শাহি জামে মসজিদ। ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে স্ব মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ বছর ধরে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকাতেই নওয়াব শাহি জামে মসজিদের অবস্থান।

ষোড়শ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কি বংশের দুই ভাই ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির প্রথম ভাগ (এক কক্ষবিশিষ্ট মসজিদ) নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে, সম্রাট আকবরের সময় তারা ধনবাড়ীর অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করে এ অঞ্চলের দায়িত্ব নেন। পরে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

কিন্তু প্রায় ১১৫ বছর আগে ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন। তিনি ১৯১১ সালের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কড়ি পাথরের লতাপাতা আঁকা অসংখ্য রঙিন নকশা। তাই কড়ি পাথরের মোজাইক করা প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এ মসজিদটি। দেয়ালের বাইরের অংশেও রয়েছে সিমেন্ট আর কড়ি পাথরের টেরাকোটা নকশা।

ধনবাড়ী নওয়াব শাহি জামে মসজিদ প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে অবস্থিত। সংস্কারের আগে এটি ছিল আয়তাকার। তখন দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট)।

কিন্তু সংস্কারের পর রীতিমতো মসজিদের আকারই বদলে যায়। বর্তমানে এটি বর্গাকৃতির। কিন্তু সাধারণ তিন গম্বুজবিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোগল মসজিদের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর প্রাচীন স্থপত্যশৈলী কিছুটা লোপ পেলেও চাকচিক্য ও সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে।

মসজিদটির চারদিক থেকে ৪টি প্রবেশপথ এবং ৯টি জানালা রয়েছে। গম্বুজ রয়েছে ছোট-বড় ৩৪টি। বড় ১০টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট বেশি। দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মসজিদের ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মেহরাবের সৌন্দর্য নজরকাড়া। সেখানে বসেই খুতবা পাঠ করেন ইমাম।

মসজিদটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সুউচ্চ ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের চূড়ায় ১০টি তামার চাঁদ, যা মিনারের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে। ভেতরের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যেগুলো নারিকেল তেল দিলে আলো দিত। রয়েছে মোগল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও।

মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি, সাদা সিমেন্ট, কড়ি পাথর, লোহার খাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সমাধি। মসজিদের পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের বিশাল এক দীঘি। মৃত্যুর আগে এ স্টেট ওয়াকফ করে যান নওয়াব আলী। ওয়াকফকৃত সম্পদেই মসজিদ, এর পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা ও ঈদগাহ পরিচালিত হয়ে আসছে।

শত বছরের পুরোনো মসজিদটিতে একসঙ্গে ২০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন ধারণকারী মসজিদটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছে ইসরায়েলিরা

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত?

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১০

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

১১

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১২

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৩

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

১৪

২৮ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

২০৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী / আসিফ এপারেলসের এমডিসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৬

শহীদ আলভীর অসুস্থ পিতার পাশে আমিনুল হক

১৭

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

১৮

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

১৯

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

২০
X