পোশাক শিল্প খাতের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি এবং দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালে বরিশালের নাজিরপুরে একটি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ শুরু করে বস্ত্র অধিদপ্তর। এরই মধ্যে দুই বছর কেটে গেলেও এখনো কোনো কাজ শুরু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়টি।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা বস্ত্র অধিদপ্তর মেয়াদ নতুন করে দুই বছর এবং প্রায় ৮ কোটি টাকা বাড়ানোর জন্য প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। তবে সংশোধনী প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে দুই বছরেও কেন কোনো কাজ শুরু হয়নি, সেটাও জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পোশাক শিল্পে দক্ষ জনবলের চাহিদা মেটাতে নেওয়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নাজিরপুর স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালে। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ওই বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সেই হিসাবে দুই বছর ২ মাস শেষ হয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই বছর সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৪ সালের পরিবর্তে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে তিন বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকবে ৫ বছরে।
ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা ছিল ২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দুই বছর শেষে জমি এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে নতুন করে আরও ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। দুই বছরের অধিক সময়ে কাজের কোনো অগ্রগতি না হলেও আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো কাজ না হলেও এরই মধ্যে ৭৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। খরচ করা হয়েছে বিভিন্ন সম্মানী এবং জমি অধিগ্রহণ খাতে।
এদিকে বস্ত্র অধিদপ্তরের আলোচ্য প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। জানা গেছে, চলতি মাসেই আলোচ্য প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনরে আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম। পিইসি সভায় অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
পিইসি সভার কার্যপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ১ একর জমির বিপরীতে ৭১ লাখ ৬৮ হাজার টাকার সংস্থান ছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের হালনাগাদ অগ্রগতি এবং ব্যয়ের ভিত্তি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।
মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ৫ হাজার ১৪ বর্গমিটার আয়তনের চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার সংস্থান ছিল। সেখানে ৩২ দশমিক ৩৩ বর্গমিটার আয়তন কমলেও ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ভবনের ব্যয় বৃদ্ধির ভিত্তি ও যৌক্তিকতা জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।
মূল অনুমোদিত ডিপিপির চেয়ে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনীতে ভূমি উন্নয়নে অতিরিক্ত ২৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা, যন্ত্রপাতি ও ল্যাবসামগ্রীর ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, আসবাবপত্র কেনাকাটায় ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।
প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়াইল হক কালবেলাকে বলেন, এখনো জমি অধিগ্রহণই শেষ হয়নি। জমি অধিগ্রহণ না হলে তো কোনো কাজ করা যাবে না। এ কারণে মূলত প্রকল্পের কোনো কাজ করা যায়নি। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জমি খোঁজা হচ্ছে। জমি পেলেই কাজ শুরু হবে।
অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় ধরা হয়েছিল। এখন তো সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। জমি এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে, একই সঙ্গে রেট শিডিউলের পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কাজ না হলেও খরচ হওয়ার বিষয়ে বলেন, জমি অধিগ্রহণের পেছনে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া সম্মানী এবং অন্যান্য কিছু কাজে কিছু টাকা খরচ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনসহ অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন, ভৌত অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাসহ বরিশালের নাজিরপুরে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং বস্ত্র শিল্পের ফ্লোর লেভেলের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১ একর জমি অধিগ্রহণ, চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ, বাউন্ডারি ওয়াল, কম্পাউন্ড আরসিসি রোড, ভূমি উন্নয়ন, আসবাবপত্র (ইনস্টিটিউট), শহীদ মিনার এবং সাবস্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ।
মন্তব্য করুন