শাহ আলম খান
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৫৮ এএম
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মন্ত্রিসভা কমিটির নির্দেশনা

দিল্লির সঙ্গে চুক্তির আগে নেপালের বিদ্যুৎ নয়

দিল্লির সঙ্গে চুক্তির আগে নেপালের বিদ্যুৎ নয়

বর্তমানে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ। দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ-সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতিও এসেছে বেশ। এখন বাকি কেবল নেপালের ওই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দিয়ে বাংলাদেশে আনা। আর এ প্রক্রিয়াটিই এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। কারণ, বাংলাদেশে নেপালের ওই বিদ্যুৎ আনতে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য দিল্লির সম্মতির প্রয়োজন হবে। এ সম্মতির জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে হবে। সেটিও কোনো সিঙ্গেল কান্ট্রির চুক্তি নয়। প্রয়োজন পড়বে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ত্রিপক্ষীয় চুক্তির। এরপরই ভারতের বহরামপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে প্রবেশ করবে।

গতকাল রোববার ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে জয়েন্টভেঞ্চার প্রকল্প, উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে গৃহীতব্য কার্যক্রম যথাদ্রুত বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠক থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানে এ কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে কমিটি বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশি এবং বিদেশি যে কোনো বিদ্যুৎ সংস্থা বা কোম্পানির মধ্যে যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যও পরামর্শ দিয়ে থাকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বৈঠক থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সরকারের ব্যয়ের বিষয়টিও আরও যাঁচাই-বাছাই করার নির্দেশনা রাখা হয়। এ ছাড়া ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসায় ভারতকে ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি দিতে হবে। এসব ফি কোন দেশ দেবে এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। পাশাপাশি আমদানিতে এ-সংক্রান্ত শুল্ক নির্ধারণের অমীমাংসিত বিষয়টিও দ্রুত নিষ্পন্ন করতে বলা হয়। এ ধরনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সর্বিক একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তাব আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিলে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে গত মে মাসে বিদ্যুতের মূল্য ও ট্রান্সমিশন ফি নিয়ে এ বিষয়ে সমঝোতাও হয়েছে। ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে ভারত কর্তৃপক্ষকে। ভারতের বিদ্যুৎবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটা ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী।

বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সে অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করা হবে। চূক্তির মেয়াদ ৫ বছরের জন্য। তবে নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। গত জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ভারত সফর করেন। ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নেপালের সঙ্গে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট কত হতে পারে, জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রে গড়ে দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট সাত টাকার কিছু বেশি। ভারতের কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দাম কিছু বেশি। তবে নেপাল থেকে আমদানি করা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকার কাছাকাছি থাকতে পারে।

এ ছাড়া বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, শীতের সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। এ সময় আবার নেপালে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেলেও কিছু কিছু এলকায় বরফ পড়ায় বেশি পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। তাই শীত মৌসুমে নেপাল বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। সে সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কম হওয়ায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ দেশটিতে রপ্তানি করা যবে। আবার গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে নেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আমরা আমদানি করতে পারব। এতে দুই দেশই লাভবান হবে। বিদ্যুৎ আমদানির শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে কোনো উদ্যোক্তা বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে একটি নিদির্ষ্ট সময় পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। একইভাবে আমদানি করা বিদ্যুতেও একটা সময় পর্যন্ত এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

‘সঠিক ও মানসম্পন্ন সংবাদ উপস্থাপনে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে’

আন্দরকিল্লা মসজিদ আইকনিক করতে ব্যয় ৩০০ কোটি

১০

মেসির চেয়েও ধনী শুধু দুইজন ক্রীড়াবিদ!

১১

প্রবাসীর ছেলেকে দাদা-দাদির কবরের পাশে ঠাঁই দিল না চাচারা

১২

শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১৩

বিপিএলের জন্য নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে রাজশাহী স্টেডিয়াম

১৪

সাংবাদিককে আটক করে পুলিশের মারধর, গায়েব করার হুমকি

১৫

রেড ক্রিসেন্ট থেকে এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি

১৬

নাসিরের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আবারও এনসিএল শিরোপা রংপুরের ঘরে

১৭

কিশোরগঞ্জ থাকবে ঢাকাতেই, ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

১৮

মক্কায় ১২৫ কিমি এলাকাজুড়ে স্বর্ণের খনির সন্ধান 

১৯

অগ্রযাত্রায় নবীন শিক্ষকদের অবদান রাখতে হবে : খুবি উপাচার্য

২০
X