প্রথমবারের মতো মহাবিশ্বের আদি অবস্থা ‘এক্সট্রিম স্লো-মোশনে’ পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা এটি সম্ভব করেন মহাবিশ্বে ‘কোয়াসার’ নামে পরিচিত বিশালাকারের উজ্জ্বল বস্তুর ডাটা ব্যবহার করে। এগুলো পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে, এত উজ্জ্বল আর বিশাল যে, জ্যোতির্বিদরা এগুলোকে ‘বাতিঘর’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কোনো কোয়াসারের আলো মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করার সময় নক্ষত্র থেকে শুরু করে ছায়াপথসহ সবকিছুরই ইতিহাস তুলে নিয়ে আসে।
দুই দশক ধরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা ১৯০টি কোয়াসার পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এ থেকে পাওয়া ডাটা নিয়ে কার্যত ‘মহাবিশ্বের ঘড়ি’ বানানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিস্কোপে দেখতে পাওয়ার আগে এইসব কোয়াসারের আলো কয়েকশ কোটি বছর মহাকাশ ভ্রমণ করেছে, যেগুলো গবেষক দলকে মহাবিশ্বের শুরুর সময়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই পুরো প্রক্রিয়া আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে বলা হয়েছে, কীভাবে স্থান ও কালভেদে সময় ভিন্নভাবে প্রবাহিত হয়। এর মানে দাঁড়ায়, কোনো ব্যক্তির কাছে একটি সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা অন্যের জন্য ভিন্ন সময়ে ঘটতে পারে। এর ফলে, দূরের বা প্রাচীন মহাবিশ্বের সময় বর্তমান সময়ের তুলনায় ধীরগতিতে চলা উচিত।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক গেরেন্ট লুইস বলেন, আইনস্টাইনের কল্যাণে আমরা জানি যে, সময় ও স্থান একে অন্যর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর সময়ের শুরুতে ‘বিগ ব্যাং’-এর একক বিন্দু থেকে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের মানে দাঁড়ায়, আদি অবস্থার মহাবিশ্বে সময় বর্তমানে প্রবাহিত সময়ের তুলনায় অনেক ধীরগতির। এ গবেষণায় বিং ব্যাং ঘটার প্রায় একশ কোটি বছর পরের ঘটনা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তিনি বলেন, প্রায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগের বিগ ব্যাং ঘটার পরপরই মহাবিশ্বে সময় বর্তমান সময়ের এক-পঞ্চমাংশ গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। অধ্যাপক লুইস ও তার সহকর্মী ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. ব্রেন্ডন ব্রিউয়ার এই অনুসন্ধান প্রকাশ করেছেন ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমি’ জার্নালে।
মন্তব্য করুন