জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০৩:৪৮ এএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কম সহিংসতায় স্বস্তি ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে অস্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন
কম সহিংসতায় স্বস্তি ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে অস্বস্তি

সদ্য সমাপ্ত ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনের পর এবারের উপজেলা নির্বাচনে বড় ধরনের তেমন কোনো সহিংসতা না হওয়ায় কমিশনে যেমন স্বস্তি রয়েছে, তেমনি রেকর্ডসংখ্যক কম ভোটার উপস্থিতির তকমাও নিতে হয়েছে কমিশনকে। এ ছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন নিয়েও বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সংস্থাটি। তবে বিষয়টিকে রাজনৈতিক বলে মনে করছেন সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। রাজনৈতিক সংকট নিরসন হলে ভবিষ্যতে এসব নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা সন্তুষ্ট। নির্বাচনে তুলনামূলক কম সহিংসতা হয়েছে। ভোট পড়ার হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হলে বেশি সন্তুষ্ট হতাম। নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়নি। যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়, তখন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে যায়। আশা করি মানুষ আগামীতে আরও সচেতন ও গণতান্ত্রিক চেতনা উপলব্ধি করে ভোটমুখী হবেন।

গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি, ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ৮৭টি এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৬০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া দুর্গত এলাকার ১৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয় গত রোববার। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

এর আগে দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোটের তপশিল ঘোষণা করে কমিশন। পরে মামলাসহ নানা জটিলতার কারণে ৪৬৯টিতে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে গড়ে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং চতুর্থ ধাপে ৩৪ শতাংশ ভোট পড়ে। প্রথম ধাপে রেকর্ডসংখ্যক কম ভোটের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন। এর পেছনে কৃষকদের ধানকাটা, বৃষ্টিসহ পাঁচটি কারণকে দায়ী করে পরের ধাপে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ছিল কমিশন। কিন্তু নানা উদ্যোগের পরও পরবর্তী ধাপগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় বিএনপির বর্জনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এর আগে ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে।

এবার উপজেলা নির্বাচনে কৌশলগত কারণে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে। শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের নির্দলীয় নির্বাচনের সেই কৌশল কাজে আসেনি। শুরুতে ভোটার উপস্থিতিতে খানিকটা সন্তুষ্টের কথা বলা হলেও পরে কম ভোটার উপস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের মতো বিএনপিকেই দায়ী করেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।

কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অনাগ্রহ নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক ব্যথিত ও বিব্রত করেছে। তাই প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি দেখে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটে মনোযোগ দেয় কমিশন। সেখানে খানিকটা সফলতা লাভ করে সংস্থাটি। নির্বাচনে অতীতের তুলনায় এবার সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের ঘটনা তুলনামূলক কম ঘটেছে। এতেই কমিশন সন্তুষ্টি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান ও আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্যই এবারের উপজেলা নির্বাচন আয়োজন করে কমিশন। বিরোধীদের বর্জনের মুখে ক্ষমতাসীনদের নিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস দেখাননি ভোটাররা। পরিস্থিতির উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এর অন্যতম কারণ নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা বিরাজ করছে মন্তব্য করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলীম বলেন, সব দল অংশ না নেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। সেজন্য নির্বাচনের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। এজন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা থেকে ৩৫ ব্যক্তি অব্যাহতি পাচ্ছেন 

এনবিআরের সহকারী কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস বরখাস্ত

সকাল ৯টার মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব জেলায় 

‘কার্টা ব্লু’ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশিদের সতর্ক করল ইতালি

যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. মুজিবের ছেলের বিয়েতে সস্ত্রীক তারেক রহমান 

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত, হেফাজতের শোক ও সহায়তার আহ্বান

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসূচি দিল ছাত্রদল

বনানীর সেলসিয়াস সিসা লাউঞ্জে পুলিশের অভিযান

অবশেষে মাদক সম্রাজ্ঞী আ.লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তার আটক

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে ফেরার পথে জাগপা সভাপতিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম

১০

আদাবরে পুলিশের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা

১১

নাটোরে ডা. আমিরুলকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি ড্যাবের

১২

গাজীপুরের কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরানো হলো নাজমুল করিমকে

১৩

একাত্তরে ভুল করেছেন, এখনো ভুলের রাজনীতিতে আছেন : টুকু

১৪

দুই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার সাকিব ও সিকান্দারকে ‘এক’ করলেন জুলফিকার!

১৫

বিএনপিকে এনসিপির শুভেচ্ছা / ‘আমরা তর্কবিতর্ক করব কিন্তু পারস্পরিক সৌহার্দ্য থাকবে’

১৬

পুরো সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাস জানাল আবহাওয়া অফিস

১৭

নদীতে জাল ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা, জেলের মৃত্যু

১৮

ক্ষমা চাইলেন রিটকারীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া সেই শিক্ষার্থী

১৯

আহত চবি শিক্ষার্থীদের দেখতে চমেকে শাহজাহান চৌধুরী

২০
X