শীত আসার আগেই শীত মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। বছর ঘুরে একটি ঋতুর আগমনে যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন অনেকে। উৎসবের মতো করেই কেউ কেউ নিজেকে প্রস্তুত করেন শীত বরণ করতে। দীর্ঘদিনের অবহেলায় থাকা শীতের কাপড়গুলো ব্যবহার উপযোগী করার সময় হয়ে গেছে। তা ছাড়া আরও কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় শীত আসার আগে। চলুন তাহলে জেনে নিই—
পোশাক: শীতে মানুষ বাহারি ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করে। শীতের তীব্রতা কমাতে গরম পোশাক যেমন সোয়েটার, জ্যাকেট, স্কার্ফ, মোজা ও উষ্ণ টুপি কত কিছুই না ব্যবহার করে। তাই শীতের পোশাকগুলো পরিষ্কার করে ফেলুন আগেভাগেই। কারণ, সারা বছর ব্যবহার না করার কারণে তাতে নানা ধরনের জীবাণু জন্ম নিতে পারে। এ ছাড়া বাসার গরম কম্বল, ব্ল্যাংকেট এবং বিছানার চাদরও পরিষ্কার করে নিন।
ঘর পরিষ্কার: শীতের সময় ধুলোবালির পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ধুলোবালির কারণে বাড়িঘর অপরিষ্কার হতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, ধুলোবালির মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের অসুখও। তাই, এ সময় বাড়িঘর পরিষ্কার রাখাও সমান জরুরি। জানালা ও দরজায় ভারী পর্দা লাগাতে পারেন। তাতে ঘরে ধুলোবালি কম প্রবেশ করবে। বাড়ির মেঝে, আসবাব, কার্পেট সব নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
ত্বকের যত্ন: শীতের সময় আলাদাভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। কারণ শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তবে শীত আসার আগেই শীতের প্রভাব পড়তে থাকে আমাদের ত্বকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে শীতের আগে বিভিন্ন প্রসাধনীসামগ্রী কিনে রাখা দরকার। ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, স্নো, পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, বডি লোশন, লিপজেল, গ্লিসারিন, গোলাপজল ইত্যাদি কিনে হাতের কাছে রাখুন।
শীতকালীন খাদ্যাভ্যাস: শীতে শীতকালীন সবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার। এতে নানাবিদ পুষ্টি থাকে। তা ছাড়া গরম খাবার, যেমন—স্যুপ, স্টু, চা এবং পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আদা চা এবং মধু-লেবুর পানীয়ও উপকারী হতে পারে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা: শীতের সময় সর্দি-কাশি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
শীত এখনো আসেনি, তাতেই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। তাই শীত এলে সুস্থ থাকাটাই চ্যালেঞ্জের! তাইতো শীতের আগে অর্থাৎ এখন থেকেই জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনি সহজেই শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবেন। আর তাতেই মৌসুমি রোগব্যাধি থেকে মুক্তি মিলবে। জেনে নিন শীতে সুস্থ থাকতে এখন থেকেই কোন কোন নিয়ম মানবেন—
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেকেই পানি পান করেন না। তবে সুস্থ থাকতে চাইলে পর্যাপ্ত পানি পান করার বিকল্প নেই। নিয়মিত সঠিক পরিমাণে পানি পান না করলে শরীরে পানির ঘাটতি অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন হয়ে আপনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
সকালের খাবার মিস করবেন না
অনেকেই ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট করেন না। এ অভ্যাস কিন্তু মোটেও ভালো নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই সকালে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ব্রেকফাস্ট না করলে শরীরে এনার্জি থাকবে না। ফলে সারা দিন কাজ করার উৎসাহ পাবেন না। অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত লাগবে। কমে যেতে পারে ব্লাড সুগারের মাত্রাও। ব্রেকফাস্ট না করে অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাসের সমস্যাও দেখা দেবে।
মেপে খান কফি
শীত মানেই কফির কাপ হাতে যখন-তখন বসে পড়লে চলবে না। অতিরিক্ত কফি পান করলে ডিহাইড্রেশন, অ্যাংজাইটি, বদহজম, ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। আবার শরীরের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত ক্যাফেইন। তাই শীতের দিনে বেশি কফি পান করতে ইচ্ছে করলেও তাতে লাগাম টানুন।
জাংক ও প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন
ফাস্টফুড ও প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই এসব খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এসব খাবারে বেশি ক্যালরি, সুগার ও ফ্যাটের পরিমাণ থাকে, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই শীতের দিনে রান্নার ঝামেলা এড়াতে পাতে এসব প্রসেসড ফুড রাখা চলবে না।
এড়িয়ে চলুন অ্যালকোহল
শীতকালে বিভিন্ন উৎসব-আয়োজন বেড়ে যায়। এসব অনুষ্ঠান বা পার্টিতে অনেকেই অ্যালকোহলের ব্যবস্থা রাখেন। তবে ভুলেও তা গ্রহণ করবেন না। সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস এড়াতে হবে। কারণ, বেশি পরিমাণ অ্যালকোহল শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে শীতে শরীরে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
মন্তব্য করুন