সারা দিন ক্লান্তি শেষ বিছানায় পরতে ঘুম চলে আসে। গভীর ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ পায়ের রগ বা মাংসপেশিতে টান দিয়ে ধরে। টান লাগার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা। এ সময় পা নাড়ানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান, এই সমস্যাটি কি আপনারও আছে?
মাংসপেশির বা রগের এই টানকে ‘muscle cramp’ বলে। তবে অনেকেই জানেন না ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে কেনো টান লাগে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই সমস্যার নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে পায়ের রগ টানার সঙ্গে বেশকিছু শারীরিক সমস্যা জড়িত আছে বলে মনে করেন অনেকেই।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুমের মধ্যে পায়ে টান লাগার কারণ-
স্নায়বিক জটিলতা – প্রাথমিকভাবে এ সমস্যাকে স্নায়ুর অসামঞ্জস্য হিসেবেই ধরা হয়। পেশি ও স্নায়ুর মধ্যে সঠিক সমন্বয় না হলে এই সমস্যা বাড়তে পারে, বিশেষ করে রাতে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রবণতাও বাড়ে।
রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতি – অনেক সময় পায়ের পেশিতে যথেষ্ট রক্তপ্রবাহ হয় না, ফলে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। এর ফলেই পায়ে টান ধরার সমস্যা দেখা দেয়।
শারীরিক চাপ বা স্ট্রেস – পায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই সমস্যা হতে পারে। কোনোদিন বেশি হাঁটা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সময় পায়ে চাপ পড়লে হঠাৎ টান ধরে যেতে পারে।
পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা (Imbalance) : শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইট (যেমন: সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ও ম্যাগনেশিয়াম) এর অভাব পেশির খিঁচের কারণ হতে পারে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা স্নায়ু এবং পেশির কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন : পানি কম খাওয়া, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, এবং শরীরচর্চার অভাব এ ধরনের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
অত্যধিক ঠান্ডা বা গরম : পরিবেশের তাপমাত্রার পরিবর্তন বা সঠিক তাপমাত্রা বজায় না রাখা পেশির সংকোচন ও খিঁচের কারণ হতে পারে।
আঘাত বা প্রদাহ : কোনো শারীরিক আঘাত বা প্রদাহের ফলে পেশির সঠিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। তখন এই ধরনের ব্যথা/ টান হতে পারে।
ক্রনিক রোগের লক্ষণ হতে পারে এটি-
কিডনির জটিলতা – কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাবের পরিমাণ ও প্রবাহ কমে যেতে পারে। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় ওষুধ সেবন করতে হয়। আর এই ওষুধ থেকেও কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে। যার ফলে পায়ে রগে টান লাগতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা – ব্লাড সুগার বেড়ে গেলে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘ডায়াবেটিক নার্ভ ড্যামেজ’ নামে পরিচিত। এর ফলেও পায়ে টান ধরতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ – হাই ব্লাড প্রেশারের প্রভাবেও অনেক সময় ঘুমের মধ্যে পায়ে টান লাগতে পারে।
পার্কিনসনস রোগ – এটি এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে হাত-পা আক্রান্ত হয়। এ কারণেও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ে টান ধরতে পারে।
তবে পায়ে টান পরলে তাৎক্ষণিক কী করবেন?
ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে হঠাৎ খিঁচ ধরলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিলে ব্যথা ও অস্বস্তি কমানো সম্ভব—
ম্যাসাজ : খিঁচ ধরা স্থানে আলতোভাবে ম্যাসাজ করলে পেশির টান ধীরে ধীরে কমে যায়।
স্ট্রেচিং : পায়ের আঙুল নিজের দিকে টেনে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এতে সংকুচিত পেশি শিথিল হতে শুরু করবে।
গরম বা ঠান্ডা সেঁক : আক্রান্ত স্থানে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিলে খিঁচ ও ব্যথা উপশমে সহায়ক হয়।
পর্যাপ্ত পানি পান : শরীরে পানিশূন্যতা বা ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি থাকলে খিঁচ হতে পারে। তাই পানি পান করুন এবং প্রয়োজন হলে ইলেকট্রোলাইট পূরণ করুন।
হালকা ব্যায়াম : সহজ কিছু স্ট্রেচিং বা এক্সারসাইজ করলে পেশির ব্যথা ও টান দ্রুত কমে যায়।
ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে খিঁচ বা টান পড়া সাধারণ একটি সমস্যা হলেও তা বেশ অস্বস্তিকর। তবে চিন্তার কিছু নেই—সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে সহজেই এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অভ্যাস গড়ে তুললেই এ অসুবিধা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
সূত্র : এবিপি নিউজ
মন্তব্য করুন