‘ন্যায্য মজুরি’ কথাটা শুনতে যতই ভালো লাগুক, বাস্তবে কথাটা বেশ বিভ্রান্তিকর। মজুরি কত হলে ন্যায্য হয়, সেটা নিয়ে পণ্ডিতরা কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি কোনোকালে। অথচ প্রশ্নটা খুব জরুরি, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে দেশে দেশে রাষ্ট্রবিপ্লব ও রাজনীতির চাকা এ প্রশ্নটাকেই ঘিরে আবির্ভূত হয়েছে।
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস একটু সতর্কভাবে পড়তে গেলেই আমরা দেখতে পাব, গণতন্ত্র এবং সভ্যতার যতগুলো মানদণ্ড সেখানে বিকশিত হয়েছে, প্রায় সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো না কোনোভাবে শ্রমিক আন্দোলন কিংবা নিপীড়িত মানুষের আন্দোলনের ফসল। মাত্র একশ বছর আগেও সম্পত্তিবান গুটিকয়েকই ভোট দিতে পারত। সামাজিক নিরাপত্তা, আইনের চোখে সমান থাকা, নির্যাতিত না হওয়ার অধিকার, সংগঠন করার অধিকার, বর্ণবাদী আইন থেকে মুক্তি, মাতৃত্ব ও অন্যান্য অধিকার, সার্বজনীন শিক্ষার বন্দোবস্ত, বেকার ভাতা, আট ঘণ্টার সর্বোচ্চ শ্রমঘণ্টা, ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য মজুরি—যা কিছুকে আমরা স্বাভাবিক বলে আজ চিনি, প্রতিটির পেছনে আছে রক্তাক্ত এবং ঘাম ঝরানো লড়াইয়ের ইতিহাস। এবং আধুনিক যে দর্শন, সংগীত, সাহিত্য আমাদের ভাবনাকে তাড়িত করে, তারও উৎস পক্ষ-বিপক্ষের কাতারে চিন্তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। শ্রমিক আন্দোলন ইউরোপ জুড়ে যত অগ্রসর হয়েছে, শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমে এসেছে। বেড়েছে তাদের অবসর-বিনোদন-ক্রয়ক্ষমতা আর সৃজনশীলতার সীমা। মে দিবস মানবিক সভ্যতা নির্মাণের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক তাই।
১৮১৭ রবার্ট ওয়েন নামের একজন স্বাপ্নিক প্রথম স্লোগানটা তুলেছিলেন: আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন, আট ঘণ্টা বিশ্রাম। তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিল শ্রমিকদের ধর্মঘট, শোভাযাত্রা, প্রচারাভিযান, রাস্তার লড়াই, ছাঁটাই, গ্রেপ্তার আর নির্যাতনের পথ ধরে। ১৮৮৬ সালের হে মার্কেটে মে দিবসের কর্মসূচি শ্রমিক আন্দোলনের উত্তুঙ্গ মুহূর্তগুলোরই একটা। বিশ্বব্যাপী এ লড়াই সংঘটনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন।
কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার বা শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারটিও খুব সহজে অর্জিত হয়নি। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে সংসদীয় একটি কমিটির সামনে একটি সুতাকলের শিশুশ্রমিকদের শিক্ষক জন মসের দেওয়া সাক্ষ্যের প্রশ্নোত্তর খেয়াল করুন—‘মিলে কি বসার কোনো আসন আছে? একটাও নেই। আমি প্রায়ই দেখেছি কাজের শেষে যখন তাদের বিছানায় শোয়া উচিত, তারা মিলের মেঝেতে পড়ে রয়েছে।’ ওই সাক্ষ্যেই জানা যায় কারখানায় নিয়মিত কর্মঘণ্টা ছিল ১৫ ঘণ্টা, মেরামতি বা তুলার অভাবে কাজ বন্ধ থাকলে শিশুদের দিয়ে আরও বাড়তি কাজ করিয়ে নিয়ে সেটা পুষিয়ে নেওয়া হতো। পুরো সময়টাই এই শিশুরা দাঁড়িয়ে কাজ করত।
১৭৭৬ সালে পরিস্থিতিটা তুলে ধরেছিলেন অ্যাডাম স্মিথ এভাবে, মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থ এতটাই পরস্পর বিরোধী যে, ‘শ্রমিকরা যথাসম্ভব বেশি পেতে এবং মনিবরা যথাসম্ভব কম দিতে চায়। প্রথম দল মজুরি বাড়াতে এবং শেষোক্তরা তাকে কমাতে সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা দেখায়...সংখ্যায় কম বলে মালিকরা অনেক সহজে সংগঠিত হতে পারে; আর তা ছাড়াও আইন তাদের সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার দেয় অথবা অন্তত তাকে নিষিদ্ধ করে না, অথচ শ্রমিকদের তা করা নিষিদ্ধ হয়। কাজের দাম কমানোর জন্য সংগঠন গড়ার বিরুদ্ধে আমাদের পার্লামেন্টের কোনো আইন নেই, কিন্তু তা বাড়াবার জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার বিপক্ষে অনেক আইন আছে।’
এমনকি যা পাওয়া যাচ্ছে, ততটুকুই যে শ্রমিকের পাওনা, সেটাকেও যুক্তিসিদ্ধ হতো অর্থনীতিরই বহু তত্ত্বে। এর মাঝে অন্যতম পরিচিত তত্ত্ব হলো, বেঁচে থাকতে এবং বংশবৃদ্ধি করে নতুন শ্রমিকের জন্ম দিতে যতটুকু মজুরি দরকার, তার চেয়ে বেশি মজুরি শ্রমিক কখনোই পায় না। তো, কীভাবে শ্রমিকরা তখন বেঁচে থাকত, কিংবা নতুন শ্রমিকের জন্ম দিত?
১৮৪০ সালের অ্যাসিস্ট্যান্ট হ্যান্ডলুম ওয়েভারস কমিশনারদের প্রতিবেদনে তাঁত শ্রমিক টমাস হিথের সাক্ষ্য দেখুন:
‘প্রশ্ন: তোমার সন্তানসন্ততি আছে কি?
উত্তর: না। আমার দুটি সন্তান ছিল, তবে ঈশ্বরের দয়ায় দুজনই মরে বেঁচেছে।
প্রশ্ন: তোমার সন্তানদের মৃত্যুতে তুমি খুশি?
উত্তর: নিশ্চয়ই। এজন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি তাদের ভরণপোষণের বোঝা থেকে রেহাই পেয়েছি আর হতভাগা দুটি প্রিয়জনও এই দুনিয়ার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এমন তীব্র শোষণের ফসল যে মালিকের পকেটে যেত, আইনও ছিল তারই পক্ষে। ১৮১৬ সালের একটা রায়ে সংগঠন গড়ার দায়ে নয়জন শ্রমিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়ে বিচারক স্যার উইলিয়াম গ্যারো বলেন, ‘এই সুখের দেশে আইন হীনতম প্রজাও উচ্চতম ব্যক্তিদের সমান মর্যাদা পায়, সবার স্বার্থ সমানভাবে রক্ষা করা হয়, এখানে তো সমিতি বানানোর কোনো দরকার নেই... জ্যাকসন সাহেব ১০০-১৩০ জন মানুষকে কাজ দিয়েছেন, সাধারণ কৃতজ্ঞতাবোধের দায়িত্ব তাকে সমাজের একজন পরহিতৈষী বলে প্রশংসা করা।’
বিশিষ্টজনরা প্রায় সবাই যখন সমিতি গঠন আর মজুরি বৃদ্ধির বিপক্ষে, শ্রমিকরা কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই দেখলেন একের পর এক লাগাতার ধর্মঘটের মুখে মজুরি বাড়ল, বুনো পশুর দশা থেকে খানিকটা মানুষের জীবনের সুযোগ আসলও, কর্মঘণ্টা কমে এলো, কারখানা কিন্তু লাটে উঠল না।
সবচেয়ে বড় কথা, শ্রমিক তখনো বাঁচার মতো আর পরবর্তী প্রজন্মের শ্রমিকদের জন্ম দেওয়ার মতোই মজুরি পেতেন বটে, কিন্তু বাঁচার সংজ্ঞাটাই যে গেল বদলে। শ্রমিকের চূড়ান্ত মুক্তি সেখানে ঘটেনি, বরং লড়াকু আর জঙ্গি শ্রমিকশ্রেণিকে বশে রাখতে সারা দুনিয়া থেকে আহরিত উদ্বৃত্তের একটা অংশকে বলা চলে ঘুষ হিসেবেই দেওয়া হলো। কিন্তু নগরগুলো বাসযোগ্য হলো, বিশ্রামের সময় নিশ্চিত হওয়াতে শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে বাড়তি সময় কাটাতে পারলেন, পারলেন বিনোদন কিনতে। তার সাংস্কৃতিক মান বৃদ্ধি পেল, জীবনযাপনের ন্যূনতম মানের সংজ্ঞাটাই ক্রমাগত উচ্চ থেকে উচ্চস্তরে উঠে যেতে লাগল। সন্তানকে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য তার ধীরে ধীরে এলো, তেমনি ভোটাধিকার অর্জন আর রাজনৈতিক দল গড়ার মাধ্যমে কমবেশি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত করার, শ্রমিকের স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থ হিসেবে তুলে ধরার এবং নীতিনির্ধারণে বেশি বেশি প্রভাব রাখার সুযোগ তার ঘটতে থাকল। তার রুচি আর সামর্থ্য বাড়ল বলে বাড়তে লাগল বইয়ের বিক্রি, স্থাপিত হতে থাকল রঙ্গমঞ্চ; একদা কারখানা মালিকের উদ্যোগে তৈরি হওয়া পুলিশ বাহিনী আগের মতো আর আগের মতো মালিকপক্ষের ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে না থেকে ক্রমশ এলো রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায়, মানবাধিকারের ধারণাগুলো প্রতিষ্ঠিত হলো। রুটি চুরির মতো তুচ্ছ অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কিংবা জাহাজে দাঁড় বাইতে পাঠানোর অমানবিক সমাজ গেল পাল্টে। ডিকেন্স আর হুগোর যুগের সমাপ্তি ঘটল ইউরোপে।
ভারতবর্ষের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটা তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো—বদরুদ্দীন উমরের ভাষায়—শ্রমিকদের দুর্বিষহ কর্মঘণ্টা আর অমানবিক মজুরির দশা ‘পরিবর্তনের তাগিদ ভারতের জাতীয় সংগঠন ও নেতৃত্ব, অথবা এমনকি শ্রমিকদের নিজেদের থেকেও আসেনি। এসেছিল প্রধানত ল্যাঙ্কাশায়ারের বস্ত্র-শিল্পমালিকদের থেকে।’ এ চাপের কারণ কোনো মানবিক উপলব্ধি না, মুনাফার প্রতিযোগিতা। শ্রমিককে বাঁচিয়ে রাখার এবং নতুন শ্রমিক তৈরির খরচা ব্রিটেনে এরই মধ্যে বেড়ে গিয়েছিল উত্তরোত্তর শ্রমিক আন্দোলনের ফলে। বদরুদ্দীন উমর এ বিষয়ে ১৮৭৫ সালের অমৃতবাজার পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে মালিকপক্ষের বুদ্ধিজীবীদের যে মনোভাবটি তুলে ধরেছেন, তা আজও প্রসাঙ্গিক—‘উঠতি শিল্পের ধ্বংসের থেকে আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে মৃত্যুর অধিকতর হার অনেক বেশি পছন্দযোগ্য। শিল্পমালিকরা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই আমরা শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করতে পারি।’
দেশ ভাগের পর বাংলার অধিকাংশ শিল্প পশ্চিমাংশে পড়লেও ৪৭-পরবর্তী সময়ে পাটকল, বস্ত্রকলসহ কিছু ভারী কারখানা গড়ে ওঠে। শ্রমিক সংগ্রামও বিস্তৃত হয়। শ্রমিকদের জঙ্গি আন্দোলনের মুখে ৬৯ নূর খান কমিশন যে মজুরি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, তা দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় ছয় মণ চাল কিনতে পারত। ষাট দশকের জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল সংগ্রামে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা।
অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বোপায়ে বঞ্চিতশ্রেণি বলা যায় এ শ্রমিকদেরই। স্বাধীনতার পর ৭৫-৭৬ সালের মাঝে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ অংশ বৃদ্ধি পায় মাত্র দশমিক ৪০ ভাগ, কিন্তু উৎপাদন সামগ্রী বাবদ খরচ ১২.২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৮.৪০ ভাগে। কারখানাজাত পণ্য খুচরা পর্যায়ে বিক্রির বেলাতে ৮০-৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করা হতো। এর প্রভাবে যে বিপুল মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়, তাতে দরিদ্রতর মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। আর এদের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয় সদ্য স্বাধীন দেশে আপাতত কোনো দাবি-দাওয়া তোলা যাবে না, ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না এ অজুহাত তুলে।
তবে বাংলাদেশে ট্রেউ ইউনিয়নের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসে জিয়াউর রহমানের আমলে। বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে দশকের পর দশক ধরে প্রতিষ্ঠিত পাটকল-বস্ত্রকল-চিনিকলগুলোকে তুলে দেওয়া হয় এমন ব্যক্তিদের হাতে, কারখানা ক্রয় ও চালানোর জন্য যাদের নগদ অর্থও দেওয়া হয়। ফলাফল একদিকে কারখানার জমি-যন্ত্রপাতি বিক্রি করে, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ মেরে দিয়ে দুই উপায়ে জনগণের সম্পদ লোপাট। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ট্রেড ইউনিয়নের পতনও তখন থেকেই।
আশির দশক থেকেই অবশ্য বাংলাদেশে পোশাকশিল্প খাতটিও বিকশিত হতে থাকে। আজকে এই খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত, যাদের বড় অংশটিই নারী। এ খাতের একটি বড় মুশকিল হলো দর্জিশ্রম ছাড়া খুব সামান্যই মূল্য সংযোজিত হয় এ খাতে। ফলে অন্যান্য বৃহৎ শিল্প খাতগুলো ধ্বংস হওয়া অর্থনীতিতে অন্যান্য বৃহৎ শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেশ কম। আবার, একই সঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি এত কম যে, তাদের চাহিদাহীনতা দেশে অন্যান্য উৎপাদনী খাতকে গতিশীল করছে না। ফলে ভোগ্যপণ্যের খুব সামান্য চাহিদা তৈরি হচ্ছে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে। ৬৯ সালের ছয় মণ চাল কেনা শ্রমিকদের সঙ্গে তুলনা করলে আজকের পোশাকশিল্প শ্রমিকরা ৫৩০০ টাকায় সাড়ে তিন মণ মাঝারি মানের চালও কিনতে পারেন না। অন্যদিকে চালের দামের সঙ্গে তুলনা করলে ভয়াবহতা বোঝা যাবে না পুরোপুরি, কেননা বাড়ি ভাড়ার অর্থে চিন্তা করলে একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের মাসিক আয়ের প্রায় পুরোটা লাগবে ঠাসাঠাসি দুই কামরার একটা বাসা ভাড়াতে। ৬৯ সালে এটা ছিল অভাবনীয়। উৎপাদন খরচা কমানোর জন্য মালিকরা যে অনিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করতে শ্রমিকদের বাধ্য করেন, তারই তো পরিণাম রানা প্লাজা বা তাজরীনের মতো নৃশংস ঘটনা।
বাংলাদেশে আজকে যে সামগ্রিক অগণতান্ত্রিকতা, উৎপাদনী ক্ষেত্রে বিকাশহীনতা, শিল্পাঞ্চলগুলোতে মাফিয়া তৎপরতা, জনগণের আইনি অধিকারহীনতা রয়েছে, তার সঙ্গে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকারহীনতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে শ্রমিককের অধিকারের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থের বিকাশের সম্পর্কটি কী, সে বিষয়ে উপলব্ধির চেষ্টারও ঘাটতি প্রবল। বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে ক্রয়ক্ষমতার আওতার প্রায় বাইরে রেখে, শিক্ষা-চিকিৎসা সেবার বাইরে রেখে পণ্যের চাহিদা যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ যেমন নেই, তেমনি নেই এমনকি সংগীত, শিল্পকলা বা সংস্কৃতির বিকাশেরও সুযোগ।
শ্রমিকদের মজুরির বৃদ্ধির প্রশ্নটি তাই জাতীয় মুক্তির প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। নারী শ্রমিকরা হয়ে উঠছেন সেই সংগ্রামের অগ্রসর সেনানী।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক
মন্তব্য করুন