আজ একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক আবুল হায়াতের ৮১তম জন্মদিন। আজ তিনি তার জীবন চলার পথে ৮০ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৪৪ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন এ কিংবদন্তি। তবে দিনটি ঘিরে যে উৎসবের কথা ছিল সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এবং দেশে বন্যাদুর্গত এলাকাবাসীর কথা ভেবে সরে এসেছেন।
আবুল হায়াত জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে নিজ বাসাতেই স্ত্রীর সঙ্গে ঘরোয়াভাবে দিনটি উদযাপন করবেন। তবে একেবারেই অনানুষ্ঠানিকভাবে আজ বিকেলে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র উদ্যোগে আবুল হায়াতের ৮১তম জন্মদিন উদযাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। আবুল হায়াত জানান, বিকেল ৫টায় তিনি ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র অফিসে যাবেন। মূলত, সহশিল্পীদের বিশেষ অনুরোধেই তিনি ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র এ অনানুষ্ঠানিক আয়োজনে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন। এদিকে চলতি মাসের একেবারেই শেষপ্রান্তে প্রকাশ করার কথা রয়েছে আবুল হায়াতের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘রবি পথ’।
১০ বছর ধরে তিনি তার এ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি লিখে যাচ্ছেন বলে জানালেন। জন্মদিন, অভিনয়, নির্মাণ এবং আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীকালে সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার ৮১তম জন্মদিন নিয়ে যে পরিকল্পনা ছিল, তা বাতিল করেছি। পরে তা করা যেতে পারে, কিন্তু এখন নয়। আর বইটি মূলত আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান বিপাশা ও নাতাশা এবং তৌকীর, শাহেদের প্রবল আগ্রহে ও চাপেই দীর্ঘ ১০ বছর সময় লাগলেও অবশেষে শেষ করতে পেরেছি। শেষ পর্যন্ত যে বইটি প্রকাশ করতে পারছি, এটাই আসলে অনেক কিছু। ভালো গল্প পেলে কিংবা সময়োপযোগী গল্প রচনা করতে পারলে এখনো নাটক নির্মাণের ইচ্ছা আছে। আর অভিনয় তো এখনো করে যাচ্ছি। জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আমজনতার যে ভালোবাসা, তাদের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তার সঙ্গে আসলে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তাদের এ ভালোবাসার মধ্যেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।’ আবুল হায়াতের অভিনয়ের যাত্রা শুরু থিয়েটারে। বর্তমানে দেশের অন্যতম নাট্যদল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। থিয়েটারে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে টেলিভিশন নাটক, সিনেমায় অভিনয় করে দেশজুড়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। এখনো সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন। পাশাপাশি দাম্পত্যজীবনেও দারুণ সুখী তিনি। আবুল হায়াত ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অন্য ভুবনের ছেলেটা’, ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘শেখর’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার থেকে জোছনার ফুল’, ‘শুকনো ফুল রঙিন ফুল’, ‘আলো আমার আলো’, ‘নদীর নাম নয়নতারা’, ‘খেলা’, ‘শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট’, ‘হাউজফুল’, ‘এফএনএফ’সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু গল্পনির্ভর সিনেমায়। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে—‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জয়যাত্রা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘ফাগুন হাওয়া’ ইত্যাদি।