

কোক স্টুডিও বাংলা সিজন ৩-এর পঞ্চম গান ‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’ প্রকাশ পেয়েছে। এরপরই গানটি নিয়ে আলোচনা হয় শ্রোতা মহলে। গানটি পরিবেশন করেছেন উদীয়মান তারকা অংকন কুমার ও শেখ মুমতাহিনা মেহজাবিন। গানটিতে সুর দিয়েছেন শুভেন্দু দাস। অংকন ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি গায়িকা-গীতিকার প্রগতা নাওহা মিলে লিখেছেন গানের কথা। এ গানের গল্প ও নিজের সংগীতের জার্নি নিয়ে প্রগতার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। লিখেছেন মহিউদ্দীন মাহি।
প্রগতা নাওহা । ছবি : সংগৃহীত
ছোটবেলা থেকেই কি প্রবাসে থাকা হচ্ছে?
আমার জন্ম বাংলাদেশে। লেখাপড়াও সেখানে। ২০২১ সালে কানাডায় এসেছি পড়াশোনা করার জন্য। আমার পরিবারের সবাই বাংলাদেশে থাকে। এখানে আমার নতুন বন্ধুরা আছে। কাজ, পড়াশোনা ও উইকেন্ডে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই ভালো সময় কাটছে আমার।
প্রবাস জীবন কেমন যাচ্ছে...
ভালো যাচ্ছে। সবকিছুই এখানে নিয়ম অনুযায়ী চলে। যা আমি বেশ উপভোগ করছি।
প্রগতা নাওহা। ছবি : সংগৃহীত
গানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কত বছর থেকে?
১৬ বছর বয়স থেকে গান করি। প্রথমে দেশের একটি বেসরকারি রেডিওতে আমার গান গাওয়ার সুযোগ হয়। এরপর থেকেই নিয়মিত গানের সঙ্গে সম্পর্ক। রেডিওতে গান করার সময় বিভিন্ন স্টেজ পারফরম্যান্সের সুযোগ আসে। সেগুলো নিয়মিত করতে থাকি। এরপর নিজে গান লিখে গাইতে থাকি। এভাবেই সংগীতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়।
গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লেখেন এবং বাদ্যযন্ত্র বাজান। একজন মিউজিশিয়ানের এসব বিষয়ে দক্ষ থাকা কতটা জরুরি?
আমি মনে করি, একজন মিউজিশিয়ানের অবশ্যই বাদ্যযন্ত্রে দক্ষ থাকা উচিত। কারণ একজন শিল্পী যখন গান লেখা ও গাওয়ার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারবে, তখন তার জন্য সংগীতটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সে নিজের মতো করে গান করতে পারবে। এ ছাড়া সংগীত নিয়ে পড়াশোনা থাকাটাও জরুরি। তাহলেই মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। একটি বিষয়ে আপনি যত ভালোভাবে জানবেন, সেই বিষয়টি নিয়ে তত ভালো করবেন। যার জন্য আমি নিজে গান লেখা ও গাওয়ার পাশাপাশি গিটার বাজানো শিখেছি। কারণ যখন আমি যেটা করি সেটি মন দিয়ে করতে চাই এবং সংগীত নিয়েই আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই। তাই এ বিষয়ে ভালো না জানলে টিকে থাকা অসম্ভব।
যে ধরনের সংগীত নিয়ে কাজ করতে চান?
আমি আমার পুরো ক্যারিয়ারে ইন্ডি এবং ইন্ডি ফোক নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া অল্টারনেটিভ মেটাল ও কনটেম্পোরারি নিয়েও কাজ করেছি। যার মধ্যে ‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’ গানটি কনটেম্পোরারি ইন্ডি গান। যেই গানটি এরই মধ্যে কোক স্টুডিও বাংলা সিজন-৩ এ প্রকাশ পেয়েছে।
কোক স্টুডিও বাংলায় আপনার লেখা ও গাওয়া ‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’ গানটি প্রকাশ পেয়েছে। এ গানের সঙ্গে যেভাবে যুক্ত হলেন?
কোক স্টুডিও বাংলার মিউজিক কিউরেটর ও প্রযোজক সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব দাদা এবং শুভ দাদা আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। অংকন কুমারের সঙ্গেও আমার আগে থেকেই পরিচয়। আমার সঙ্গে প্রথম অংকনের যোগাযোগ হয়। তারপর শুভ ভাইয়া এবং আমরা মিলে গানটির গল্প রেডি করে লিখে ফেলি।
প্রগতা নাওহা । ছবি : সংগৃহীত
গানটি লেখার সময় যে বিষয়টি আপনার মাথায় আসে প্রথম?
গানটি আমি এবং অংকন দুজন লিখি। প্রথমে অংকনের লিরিক পড়ে আমার মনে হয়, সে গানে যে গল্পটি দিয়েছে, তার সেই জায়গা ধরে আমি আমার জায়গাটি যুক্ত করি। কারণ শুরু থেকেই লং ডিস্ট্যান্স সম্পর্ক নিয়ে আমাদের কথা হয়। এরপর আমি আমার জায়গা থেকে প্রবাসে থেকে নিজের দেশ, শহর, আত্মীয় এবং বন্ধুদের অনুভব করার যে বিষয়, সেটি গানে তুলে ধরি।
‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’ নিয়ে আপনার নিজের কোনো গল্প আছে?
না, এ বিষয়ে আমার নিজের কোনো গল্প নেই। তবে বিষয়টি আমি অনুভব করতে পারি। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসে থেকে সবচেয়ে বেশি নিজের দেশ, কালচার ও পরিবারকে মিস করি। চাইলেই কাউকে দেখতে পারি না, দেশের পছন্দের কোনো জায়গায় ঘুরতে যেতে পারি না। তার পরও আমরা সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য প্রতিনিয়ত শত ব্যস্ততার মাঝেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। যা এ গানের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এ গানটি আপনার পরিচিতি কতটা বৃদ্ধি করেছে?
গানটি প্রকাশের পর পরিবার ও বন্ধুরা অনেকেই গানটি নিয়ে কথা বলেছে। তাদের ভালো লাগার কথা বলেছে। তবে অনেকেই জানতো না গানটি আমি লিখেছি। এটি জানার পর তারা তাদের ভালো লাগা জানিয়েছে। যা আমাকে আনন্দ দিয়েছে। তাদের এমন ভালোবাসা আমাকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।
প্রবাসে থেকে দেশের সংগীত নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা আছে?
আমি মাত্র চার বছর ধরে কানাডায় আছি। এখানে আসার পর থেকেই আমি গান করছি। এর মধ্যে গানের কারণে একবার দেশে আসা হয়। গান নিয়েই আমি থাকতে চাই—সেটি প্রবাসে হোক অথবা দেশে। তবে হ্যাঁ, প্রবাসে দেশের সংগীত নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। সেটি ধীরে ধীরে করব।
এখন পর্যন্ত আপনার প্রকাশিত গানের সংখ্যা?
আমার প্রকাশিত ১০-১২টির মতো গান আছে। যেগুলো ১০০টির বেশি মিউজিক্যাল প্ল্যাটফর্মে শুনতে পারবেন দর্শক। এ ছাড়া লেখা গান ৩০০টির বেশি আছে।
প্রবাসী শিল্পীদের নিয়ে দেশের মিউজিশিয়ানরা যেসব কাজ করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
প্রবাসী শিল্পীদের নিয়ে দেশের মিউজিশিয়ানরা কাজ করতে পারলে এটা ভালো হবে। কারণ বিদেশে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক আছে। যেই মিউজিক নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই কাজ করছে। এটি করতে পারলে ভালোই হবে।
প্রগতা নাওহা । ছবি : সংগৃহীত
সিনেমায় গানের ইচ্ছা আছে?
অবশ্যই আছে। এটি সব শিল্পীরই থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় আছে। সব ধরনের সিনেমায় তো আর গাওয়া হবে না। ভালো গল্প ও প্রোডাকশন হলে তখন গাওয়ার ইচ্ছা আছে।
মন্তব্য করুন