ভারতীয় মেগা সিরিয়ালের ওপর আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শক। অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু দীর্ঘ ধারাবাহিক। বিষয়টি নিয়ে বিচলিত পশ্চিমবঙ্গের বিনোদনসংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনরা। করোনা মহামারির পর থেকে মেগা সিরিয়ালগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন তারা। কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ওপর। মেগা সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকানোর উপায়ও বলে দিয়েছেন তারা।
টেকসই মেগা সিরিয়াল নির্মাণ হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গে। খুব কম সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে তাদের বেশ কিছু ধারাবাহিক। মেগা সিরিয়ালগুলোর দৈর্ঘ্যও কমে এসেছে। একটা সময় ভারতীয় দীর্ঘ ধারাবাহিকগুলোর চাহিদা ছিল রমরমা। তবে করোনা মহামারির পর তা জৌলুস হারাচ্ছে বলে স্বীকার করেছে বিজ্ঞমহল। এসব নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমেও।
মেগা সিরিয়ালে দর্শকের আগ্রহ হারানোর কারণ বর্ণনায় ভারতীয় বিনোদনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মত দিয়েছেন, দর্শকদের ধৈর্য কমে এসেছে। কেউ আবার বলছেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অধৈর্য হয়ে ওঠার ফল এটি। সময়টা রেটিংসর্বস্ব যুগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, তাই মেগা সিরিয়াল অস্তিত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কিছু কিছু ধারাবাহিকের উদাহরণও টেনেছেন তারা।
ভারতীয় ধারাবাহিক ‘জল থই থই ভালোবাসা’ সম্প্রচারের শুরু থেকেই দর্শকমনে জায়গা করে নিয়েছিল। রেটিং চার্টেও ছিল ভালো। তবুও মাত্র আট মাসে শেষ হয়েছে সেটি। ধারাবাহিক আলোর কোলেরও হয়েছে একই দশা। কিছু সিরিয়াল তো প্রায় শুরুতেই শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযোজক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অষ্টমী’ এবং সুরিন্দর ফিল্মসের ‘ভক্তির সাগর’। সম্প্রচারের দুই মাসের মাথায় বন্ধ হয়েছে দুটিই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ধারাবাহিকের দৈর্ঘ্য নিয়ে। মেগা সিরিয়াল কি ক্রমেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে?
ভারতীয় কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, দর্শক ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ উভয়ই এখন অস্থির, যার প্রতিফলন পড়ছে রেটিং চার্টে। তার মতে, বিনোদনজগতে ১০ বছর পরপর নতুন যুগ আসে। সেই যুগ আসার আগে ও পরে এমন অস্থিরতা দেখা যায়।
ভারতীয় প্রযোজক ও পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য আঙুল তুলেছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দিকে। তার অভিযোগ, যেসব ধারাবাহিক শুরুতেই ভালো করতে পারছে না, সেগুলো সরিয়ে দিচ্ছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, দর্শকের ধৈর্য কমেনি বরং ধারাবাহিকের গল্প দর্শক বুঝে ওঠার আগেই সেটি দেখানো বন্ধ হয়ে করে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য, ঋজু বিশ্বাস, মানালি দেও বিষয়টি নিয়ে একমত। তারাও রেটিং চার্টের দিকটি তুলে ধরেছেন। সাহেবের ভাষ্য, করোনা মহামারির পর দর্শকের ধৈর্য কমেছে। তা ছাড়া দর্শকের হাতে এখন বিনোদনের নানা উপকরণ রয়েছে। গল্পে মোড় না থাকলে চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছেন তারা, যার প্রভাব পড়ছে রেটিং চার্টে, বন্ধ হচ্ছে ধারাবাহিক। অভিনেতা ঋজুও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মহামারি ও বিনোদনের অন্যান্য উপকরণের ওপর। আগে টেলিভিশন ছাড়া ধারাবাহিক দেখা যেত না। এখন ওটিটিতে সেসব দেখছেন দর্শক। এতে চ্যানেলের প্রযোজক বা অভিনেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি। একই মত দিয়েছেন মানালি।
এ সমস্যার সমাধান বাতলে দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার লীনা। বলেছেন, দর্শকের রুচি বদলাতে নতুন ধারার গল্প আনতে হবে। এ ছাড়া ‘চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে ধৈর্য ধরতে আহ্বান জানিয়েছেন স্নেহাশিস। অন্যদিকে ধারাবাহিক সম্প্রচারের কয়েক মাস পর তা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখানোর আবেদন জানিয়েছেন ঋজু। এতে প্রতিটি ধারাবাহিক রেটিং চার্টে ভালো ফল করবে বলে মনে করেন তিনি।