আবু সালেহ মুসা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইগো বা ব্যক্তিত্ব দেখালে প্রেমে পূর্ণতা পায় না!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

'প্রেম' শব্দটি খুবই ছোট। অথচ বহন করছে বিশালত্বের ভার। 'প্রেম' নিয়ে ছোট থেকেই শুনে আসছি। বড়দের মুখে'তো অহরহ। মাঝেমধ্যে এ নিয়ে তারা হাসাহাসিও করত আবার কখনও বা মুখ ভারী। কিন্তু আমি বুঝতাম না বলে শুধু শুনতাম আর দেখতাম।

প্রেমের বিশালত্ব নিয়ে বুঝে উঠতে শুরু করি নবম শ্রেণিতে ওঠার পর। এই শ্রেণিতে আসার পর থেকে নিজেকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করতে শুরু করি। কেননা, আগে পড়াশোনা আর খেলাধুলার ভিতর নিজেকে দেখতে পেতাম। অথবা পরে থাকতাম বিভিন্ন বই নিয়ে। কিন্তু এখন আর পড়ালেখা বা খেলাধুলায় মন বসে না।

নবমে ওঠার আগে কিছু বিখ্যাত লেখকদের লেখা বই কিনেছিলাম পড়ব বলে। তবে হঠাৎ রুচির পরিবর্তন হতে শুরু করল। ঐ বইগুলোর দিকে তাকাতেও ইচ্ছে হচ্ছিল না। ভিতরে ভিতরে শেক্সপিয়রের লেখা 'রোমিও জুলিয়েট' পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল।

প্রতিনিয়ত কারণ খুঁজি। হঠাৎ আমি এমন কেন হয়ে গেলাম। এটা কি আমার ইচ্ছেগত পরিবর্তন? পরে একটা সময়ে বুঝতে পারি, কোনো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি আমি। ভিতরে নতুন কোনো অনুভূতি কাজ করছে। যদিও কারও সাথে শেয়ার করার সাহস হচ্ছিল না। তবে অনুভুতিটা ভালো লেগে যায়।

আমি পুরোপুরিভাবে একটা মেয়ের দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছি। কিভাবে হলাম, কেন হলাম কিছুই জানি না। চোখের দেখাতেই ভালো লেগেছিল। এদিকে তাকে নিয়ে প্রতিরাতে রঙিন রঙিন স্বপ্নগুলো চোখের ওপর হানা দিচ্ছে।

ছোট করে গল্পটা বলি!

একটি মাদ্রাসায় পড়তাম আমি। তখন সবে অষ্টম পার করেছি। নবমে ওঠার কিছুদিন পরই মাদ্রাসায় একটি সুন্দরী মেয়ে আসলো। মেয়েটাকে প্রথমবার দেখে একটু অদ্ভুত মনে হয়েছে। আমিতো তাকে দেখে অবাক হয়ে যাই। মেয়ে নাকি পরী! পাঠক হয়তো বলবেন, সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছি। কিন্তু একদমই তা নয়। আমি সেদিনের অনুভূতিটাই তুলে ধরছি মাত্র। আপনারা যাই বলুন, এমন মায়াবী মেয়ে এর আগে দেখিনি।

এদিকে পরবর্তী সংবাদে আমারতো খুশি আর ধরে না। মেয়েটি আমাদের মাদ্রাসাতেই ভর্তি হয়েছে। ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিল এর থেকে বেশি খুশি আমি আর কখনও হইনি। আগে ক্লাস তেমন করতাম না, তবে এখন আর বাদ যায় না।

দিনগুলো খুব ভালো কাটতে লাগলো। তবে একটা বিষয়ে খুব বেশি সাবধান থাকতাম। মেয়েটি যেন বুঝতে না পারে আমি তার প্রতি দুর্বল। আমি চেয়েছিলাম সেই আমার প্রতি দুর্বল হোক। তাই সেভাবেই চলতাম। এককথায় ইমপ্রেস করার চেষ্টা। যদিও আমার এসব ধারণা ভুল ছিল। তবে যখন বুঝতে পেরেছি তখন দেরী হয়ে গিয়েছিল। মেয়েরা নিজে থেকে ছেলেদের প্রতি দুর্বল হয় না। আর হলেও তা বুঝতে দেয় না।

এসএসসি পরীক্ষা খুব কাছাকাছি চলে আসায় রাতে কোচিং করতাম। মেয়েটাও আসতো কোচিংয়ে। বসতো আমাদের মাথার ওপরে, মানে দুইতলায়। প্রতিদিন যেকোনো অজুহাতে একবার হলেও দেখে আসতাম। মাঝেমধ্যে ওদের ক্লাসেও ঢুকে পড়তাম, অন্যদের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সাহস হতো না। যদিও কথা বলার জন্য ভিতরটা ফেঁটে যেত। অথচ ব্যক্তিত্ব রক্ষার জন্য এমন ভাব নিতাম যেন ওকে চিনিই না। অনেকে এটাকে ইগো মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি চাইতাম, ও আমার প্রতি আকৃষ্ট হোক। কিন্তু কথায় আছে 'মেয়েদের বুক ফাঁটে তবুও মুখ ফোটে না'।

এভাবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। সবার নতুন রকমের চিন্তা শুরু হলো। বিশেষ করে কে কোথায় ভর্তি হবে, কি বিষয় নিয়ে আগাবে, কোনটা ভালো হবে, কোনটা মন্দ হবে ইত্যাদি। আমারও একই চিন্তা। তবে ভুলে যাইনি ওর কথা। কিভাবে ভুলব, ও'তো আমার সবটা জুড়ে মিশে আছে।

এদিকে নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি। নতুন মুখ, নতুন বন্ধন সাথে সুন্দরীসব মেয়েদের আনাগোনা। কিন্তু কারও প্রতিই আমার নজর আটকায় না। আমি পরে আছি তাকে নিয়েই। দিনের পর দিন যায়, ওর প্রতি দুর্বলতাও তত বাড়ে।

আর এগুতে চাই না, এখানেই শেষ করি। তখন ওদেরও এসএসসি শেষ হয়েছে। পরীক্ষা শেষেই ও ওর বাবার কাছে বেড়াতে যায়। বলতে ভুলে গিয়েছি, ও ওর নানা বাড়িতেই বড় হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাদের কলেজেই ভর্তি হবে। সেই আশা নিয়েই স্বপ্ন বুনে চলেছিলাম। কিন্তু আমি ভুল রাতে স্বপ্ন বুনেছিলাম। ওর বাবা তার ঐখানের একটি কলেজে ভর্তি করে দেয়।

এটা জানতে পেয়ে ভেতরে ভেতরে অনেক ভেঙে পরি আমি। পেছনের দিনগুলোর কথা মনে পরতে থাকে। কষ্টটা বেড় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ভিতরের কান্না দেখানো যায় না তাই বুঝানো'ও সম্ভব হয় না।

সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ও'কে নিয়ে আমার ভাবনাগুলো কারও সাথে শেয়ার করিনি। বুঝতে দেইনি কাউকে। আমাদের ব্যাপার আমাদের ভেতরেই রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও চলে যাবার পর অনুভব করি প্রিয় কিছু হারানোর ব্যাথা। তাই নিজেকে হালকা করতে খুব কাছের এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করি। খুলে বলি সবকিছু। এখনও অনেক ভালোবাসি, তাও বললাম। এখন একটু নিজেকে হালকা মনে হচ্ছিল।

আমার বলা শেষ হওয়ার পর দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। মাঝে মাঝে ও আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। একটু পর সন্ধ্যা নেমে যায়। ও বলল, এখন যেতে হবে। কিছু বলবি না আমায়? আমার অনুভূতি নিয়ে কিছুই কি বলার নেই তোর? জিজ্ঞেস করলাম ও'কে। তখন ও আমায় বলল, জীবনে এরকম অনেক কিছুই হয়। এগুলা খুবই স্বাভাবিক। নিজেকে নতুনভাবে গুছিয়ে নে। ক্যারিয়ারের দিকে খেয়াল দে। আর হ্যাঁ তোর স্বপ্নের রাজকন্যার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়ে গেছে।

আর কোনো কথা না বলেই ও ওর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। অন্যদিকে নিথর আমি পলকহীন ওর চলে যাওয়া দেখছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিচারক থেকে প্রেসিডেন্ট, কে এই রাইসি

ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছেন

ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : রাইসি ছাড়াও যারা মারা গেলেন

রাঙামাটিতে চলছে ইউপিডিএফের আধাবেলা অবরোধ

পায়ুপথে ব্রাশ দিয়ে বখাটেদের নির্যাতন

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : কোনো আরোহী বেঁচে নেই

কে হবেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট?

হবিগঞ্জে ধান সংগ্রহের শুরুতেই হযবরল

আইপিএলে প্লে-অফে কে কার বিরুদ্ধে লড়বে?

তুর্কি ড্রোনে খোঁজ মিলল রাইসির হেলিকপ্টারের

১০

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি বেঁচে আছেন? 

১১

খোঁজ মিলল রাইসির হেলিকপ্টারের, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ২ কিমি দূরে উদ্ধারদল

১২

পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন / পড়ালেখায় এগিয়ে সজিব, অর্থসম্পদে আবুল কাসেম

১৩

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি

১৪

‘রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের খোঁজ পাওয়া গেছে’

১৫

কোরবানির ঈদকে ঘিরে স্বপ্নপূরণের আশা খামারিদের

১৬

দুই বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো ছাত্রলীগ নেতা পায়েল বহিষ্কার

১৭

বন্ধুর বাড়ি থেকে যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

১৮

রাইসির ঘটনায় উচ্ছ্বসিত মার্কিন সিনেটর

১৯

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

২০
X