সংস্কৃতিখাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আরো একটি হতাশাজনক বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) এক বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, সাংস্কৃতিক জাগরণের অনুকূল নয়। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটও আরও একবার দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের হতাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবারের বাজেটেও সংস্কৃতি খাতকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়েছে। বতমান সরকার বারবার নিজেদের সংস্কৃতিবান্ধব হিসেবে দাবি করলেও তাদের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে সংস্কৃতিখাতে তাদের বরাদ্দ দেখলে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। দেড় দশক ধরে কখনোই সংস্কৃতিখাতে বরাদ্দ তা ০.০৯ থেকে ০.১৬ ভাগের উপরে ওঠেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যেন কোনো গুরুত্বই নেই সরকারের কাছে।
বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় জীবনে সংস্কৃতি চেতনা দুর্বল হলে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। সংস্কৃতির মানবীয় রূপ ক্রমেই দূরে সরে যেতে থাকে এবং কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিনোদনের উপকরণে পর্যবসিত হয়। সাম্প্রদায়িক ভেদচিন্তা ক্রমান্বয়ে মানবিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে চলছে, সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একদিকে উন্নয়নের নামে লুটপাট বাণিজ্য, অর্থ পাচার; অন্যদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির গর্ভজাত ভোগবাদ, যৌনতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডব জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গণজাগরণ এখন সময়ের প্রয়োজন। যাকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হবে নবীন চিত্রকলা, সংগীত, নাটক, কাব্য। কিন্তু তার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে তাই, বিগত কয়েক বছর ধরে দাবি উঠছে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ ভাগ বরাদ্দ দেওয়ার। কিন্তু, এবারও সেই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে।
উদীচীর নেতারা আরও বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের জন্য বরাদ্দের একটা অংশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার, পুতুল নাট্য উৎসব, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব, যন্ত্রসংগীত উৎসব, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু, দেখা গেছে প্রায় সবগুলো অনুষ্ঠানই হয় শিল্পকলার চৌহদ্দিতে মিলনায়তনের ভেতরে যেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে।
বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আরো বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নানাভাবে তারা এদেশে মৌলবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এসব অপতৎপরতা রোধ এবং সামাজিক সংকট মোকাবেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংস্কৃতি চর্চা।
মন্তব্য করুন